সিরিয়ায় পররাষ্ট্র-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে বিদ্রোহীরা, ১৪ মন্ত্রীর সবাই শারার ঘনিষ্ঠ

0
5
জাতিসংঘে সিরিয়ার দূত গেইর পেডারসেনের সঙ্গে বৈঠকে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ হুসাইন আল-শারা (ডানে)। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ার নতুন শাসক অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদের পতনের সপ্তাহ দুয়েক পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টার অংশ হিসেবে বিদ্রোহীরা এই উদ্যোগ নিয়েছে।

সানার প্রতিবেদনের তথ্য, ক্ষমতাসীন জেনারেল কমান্ড গতকাল শনিবার সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আসাদ হাসান আল-সিবানির নাম ঘোষণা করেছে।

নতুন প্রশাসনের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সিরিয়ার জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্রের বরাতে রয়টার্স বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে মুরহাফ আবু কাসরা নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) জ্যেষ্ঠ নেতা। এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের জোট হয়েছে। আর তাদের হাতে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন হয়।

দামেস্ক থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার বলেন, মুরহাফ আবু কাসরা ও আসাদ হাসান আল-সিবানি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএসের প্রধান আহমেদ হুসাইন আল-শারার ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত। তাঁদের নিয়োগের কারণে প্রশ্ন উঠেছে, এইচটিএস সিরিয়ার সরকার গড়েছে, নাকি তাদের নিজস্ব সরকার গঠন করেছে।

‘সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারে নবগঠিত ১৪ জনের নতুন মন্ত্রিসভার সবাই আহমেদ হুসাইন আল-শারার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিংবা বন্ধু,’ জানান রেসুল সেরদার।

সিরিয়ার শাসনভার এখন কার্যত এইচটিএসের প্রধান আহমেদ হুসাইন আল-শারার হাতে। তাঁকে দেশটির ‘ডি ফ্যাক্টো’ শাসক বলা হচ্ছে। বাশার আল-আসাদের পলায়ন ও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সরাসরি যুক্ত আছেন। দেশটিতে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

আল-শারা বলেছেন, দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা প্রাথমিকভাবে তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে। নতুন করে কোনো সংঘাতে জড়ানোর আগ্রহ তাঁর নেই।

বিদ্রোহী যোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পালিয়ে যান ২৪ বছর ধরে সিরিয়া শাসন করা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এর মধ্যে সর্বশেষ ১৩ বছর সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলেছে। আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে আল-আসাদ পরিবারের টানা ৫৩ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে।

আহমেদ হুসাইন আল-শারাকে ২০১৩ সালে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ওয়াশিংটন। বলা হয়েছিল, ইরাকের আল-কায়েদা তাঁকে বাশার আল-আসাদের উৎখাতের জন্য নিয়োজিত করেছে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, আল–শারাকে গ্রেপ্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ১ কোটি ডলার পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গতকাল দামেস্কে নিজেদের দূতাবাস নতুন করে চালু করেছে কাতার। ১৩ বছর আগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পরপরই দামেস্কে দূতাবাস গুটিয়ে নিয়েছিল দোহা। বাশার আল-আসাদের পতনের পর দামেস্কে আবার দূতাবাস চালু করেছে তুরস্ক। এরপর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কাতার এ ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তারাও দামেস্কে কূটনৈতিক মিশন আবার চালু করতে প্রস্তুত রয়েছে।

আল জাজিরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.