সিরাজগঞ্জে থানায় ঢুকে ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা

0
51
আহত অবস্থায় একে একে ১২ পুলিশ সদস্য থানা প্রাঙ্গণে বিনা চিকিৎসায় মারা যান

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা থানায় হামলা করে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। রোববার বিকেলে থানা ঘেরাও করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

থানার সামনে ও ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে নিহতদের মরদেহ। রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় সেখানে পড়ে থাকা মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়নি। জেলা সদর থেকে পুলিশ এনে মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা গেছে। মরদেহের নাম, পরিচয় বা পদবী শনাক্ত হয়নি। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন।

পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম) বিজয় বসাক ১১ মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। তারা থানায় গিয়ে ১১টি মরদেহ পেয়েছেন। এর মধ্যে আটটি মরদেহ মসজিদের পাশে স্তূপ করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনটি মরদেহ পাওয়া গেছে পুকুরে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এখনও নিখোঁজ বলে তিনি জানান।

এনায়েতপুর হাট কমিটির সহ-সভাপতি মোকতার হোসেন বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে তিন থেকে চার হাজার আন্দোলনকারী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী থানা ঘেরাওয়ের পর ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ ছাদে উঠে আত্মরক্ষায় রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়লে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়। পরে তারা থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশ সদসদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পুলিশ সদসদের বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় একে একে সবাই থানা প্রাঙ্গণে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।’

এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সৌদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাশেদুল হাসান সিরাজ বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা এ মুহূর্তে নেই। দ্রুত মরদেহগুলো উদ্ধার করা দরকার। নতুবা রাতের অন্ধকারে আন্দোলনকারীরা সেগুলো গুম করতে পারে। যতদূর জেনেছি, থানায় ৩৬ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। হয়তো আশেপাশে আরও কয়েকজন আহত অবস্থায় পালিয়ে বা ভেতরেও থাকতে পারেন। তাদেরও খুঁজে বের করা উচিত। ’

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, এনায়েতপুর থানার ঘটনাটি মর্মান্তিক। আন্দোলনকারীদের মারধরে নিহত পুলিশ সদস্যদের নাম-পরিচয় ও পদবী শনাক্ত এবং মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, প্রথমে হাজারখানেক মানুষ দলবেঁধে থানার দিকে আসে। সেখানে তারা কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যায়। পরে কয়েক শ মানুষ থানায় এসে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত ১১–১২ জন পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

কুমিল্লায় হাইওয়ে থানায় ঢুকে অস্ত্র লুট, পুলিশ সদস্য নিহত: কুমিল্লায় হাইওয়ে থানায় হামলা, ভাঙচুর, অস্ত্র লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুরে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় এ ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তার নাম এরশাদ আলী। তিনি শেরপুর জেলার বাসিন্দা।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মনজুর আহমেদ মোল্লা বলেন, রোববার সকাল থেকে থানার সব পুলিশ ফোর্স মহাসড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ এক-দেড় হাজার দুর্বৃত্ত থানায় ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় তাদের বাধা দিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কনস্টেবল এরশাদ আলীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে আমার কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং আমাকেও পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। তারা ইচ্ছামতো তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায়। এ সময় থানার সকল অস্ত্র ও গুলি লুট করে তারা। পুলিশের ব্যবহৃত সব মালামাল লুট করে যাওয়ার সময় সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।  হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলা করা হয়েছে। এতে এরশাদ নামে একজন কনস্টেবল নিহত হয়েছে। আমরা ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছি।

তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত: পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানা এবং টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা, বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানা, নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি, জয়পুরহাট সদর থানা, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিস, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়, দিনাজপুর সদর থানা আক্রমণ করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে আহত হয়েছেন তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.