মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া অপর ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে এ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসীম সরকার বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্স মঞ্জুর ও আসামিদের আপিল খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রদীপসহ দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও অপর ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।’
প্রদীপের পক্ষে শুনানিতে থাকা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ আছে। উনি (প্রদীপ) চাইলে আপিল করতে পারেন।’
এর আগে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর গত ২৯ মে শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ (২ জুন) রায়ের জন্য দিন রাখেন। আজ সকালে রায় দেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা ছয় আসামি হলেন সাবেক এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদন করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
সিনহা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়, যা একই বছর ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন।
ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করতে হয়।
পেপারবুক প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল-জেল আপিল শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
গত ২৩ এপ্রিল পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু হয়, যা গত ২৯ মে শেষ হয়। শুনানি শেষে আদালত ২ জুন রায়ের জন্য তারিখ ধার্য করেন। সে অনুসারে আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসীম সরকার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাবনী আক্তার ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ শুনানিতে ছিলেন।
অন্যদিকে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও এস এম শাহজাহান, আইনজীবী শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও শফিকুল ইসলাম রিপন শুনানিতে ছিলেন।