সিজারের ৬ মাস পর নারীর পেট থেকে বের করা হলো গজ কাপড়

0
21
নারীর পেট থেকে বের করা গজ কাপড়, ছবি: সংগৃহীত

ফেনীতে সন্তান প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের (সিজার) ছয় মাস পর তীব্র ব্যথা অনুভব করেন ফরিদা ইয়াসমিন (৪০) নামের এক নারী। ব্যথা বাড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। গতকাল বুধবার ওই হাসপাতালে তাঁর পেটে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। তাঁর পেট থেকে বের করে আনা হয় একটুকরা গজ কাপড়। ওই নারীর স্বজনদের দাবি, প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসক ভুল করে ফরিদা ইয়াসমিনের পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর ভাই ফেনী সিভিল সার্জন বরাবর অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ফরিদা ইয়াসমিন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা শুভপুর ইউনিয়নের জয়চাঁদপুর গ্রামের প্রবাসী মহি উদ্দিনের স্ত্রী।

ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ফেনীর বেসরকারি আল-কেমী হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ গাইনি চিকিৎসক তাসলিমা আক্তারের তত্ত্বাবধানে ফরিদা ইয়াসমিনের সিজারিয়ান অপারেশন হয়। এক দিন পর তিনি বাড়িতে ফিরে পেটে ব্যথা অনুভব করেন। বিষয়টি চিকিৎসক তাসলিমাকে জানালে সিজার–পরবর্তী এমন ব্যথা হবে বলে রোগীকে আশ্বস্ত করেন তিনি। পরে নিয়মিত ব্যথা অনুভব করায় বিভিন্ন ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন যে ওই নারীর পেটে রক্ত পরিষ্কার করার গজ কাপড়ের টুকরা রয়েছে, যা দ্রুত অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন।

একপর্যায়ে গতকাল মধ্যরাতে ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দ্বিতীয় দফায় ওই প্রসূতির অস্ত্রোপচার করে তাঁর পেট থেকে গজ কাপড়ের টুকরা বের করা হয়। বর্তমানে ভুক্তভোগী নারী ওই হাসপাতালে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

‎এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর ছোট ভাই মো. শাহ ফয়সাল জানিয়েছেন, ‘দ্বিতীয়বার অপারেশন বাবদ আমার বোনের পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বোন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। এর দায়ভার চিকিৎসক তাসলিমাকে নিতে হবে। এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনী সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’

অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে ফেনী আল কেমী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, যিনি অপারেশন করেছেন তিনি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। ছয় মাস আগের এ ঘটনা আজ আমরা জেনেছি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম জানান, সিজারের রোগীর পেটের মধ্যে গজ কাপড় রেখে সেলাই করে দেওয়ায় চিকিৎসক তাসলিমার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর ভাই লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.