সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা, অপচয় ও চুরি কমবে

সাগরে পাইপলাইনে জ্বালানি খালাস

0
131
সাগরে পাইপলাইনে জ্বালানি খালাস

অবশেষে সাগরপথে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নামে প্রকল্পটি। এখন সাগরে তেলভর্তি জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল স্থলভাগের ট্যাঙ্ক টার্মিনালে চলে আসবে। এতে বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। খালাসের সময় কমে আসার পাশাপাশি তেলের অপচয় ও চুরি অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, সময় বাঁচাতে ও ব্যয় কমাতে আমদানি করা জ্বালানি তেল সরাসরি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে খালাসের জন্য পাইপলাইন নির্মাণে প্রায় ১৪ বছর আগে উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০০৮-০৯ সালের দিকের গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালের দিকে। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আট বছরে শেষ হলো সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নামে প্রকল্পটি। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটির ব্যয় ৬৯ শতাংশ বেড়েছে; টাকার অঙ্কে যা ৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় মোট ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সকাল ১০টা ১২ মিনিটে মাদার ভেসেল থেকে পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু হয়। এর ফলে এক লাখ টনের একটি বড় জাহাজের তেল খালাসের সময় ১১ দিন থেকে দু’দিনে নেমে আসবে। বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিপিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জাহাজ এমটি হোরে ৮২ হাজার টন অপরিশোধিত তেল (ক্রুড অয়েল) নিয়ে সৌদি আরব থেকে ২৪ জুন মাতারবাড়ীতে পৌঁছে। ২৫ জুন তেল খালাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২৮ জুন পর্যন্ত কমিশনিং কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। এরপর রোববার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দ্বিতীয় দফায় কমিশনিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য তিনটি টাগবোট এবং প্রয়োজনীয় পাইলটিং সেবা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ৯টায় এসপিএম বয়া থেকে মাদার ভেসেলের সঙ্গে হোস কানেকশন সম্পন্ন হয়। ১০টা ১২ মিনিটে মাদার ভেসেল থেকে ক্রুড অয়েল পাম্পিং শুরু হয়। বিপিসি আশা করছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বুধবারের মধ্যে মাদার ভেসেল থেকে ট্যাঙ্ক টার্মিনালে ক্রুড অয়েল গ্রহণ সম্পন্ন হবে। ট্যাঙ্ক টার্মিনাল থেকে ক্রুড অয়েল পাইপলাইনের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) পৌঁছানো হবে।

আগামী সেপ্টেম্বরে ডিজেল অংশের কমিশনিং শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। চালু হওয়া পাইপলাইনে আসছে অপরিশোধিত জ্বালানি বা ক্রুড অয়েল। সামগ্রিক প্রকল্প শেষ হলে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এটা উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। বিপিসি জানিয়েছে, এ প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্র থেকে মহেশখালী ট্যাঙ্ক টার্মিনাল পর্যন্ত ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি পৃথক পাইপলাইন এবং মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি পৃথক পাইপলাইন (ডিজেল ও ক্রুড অয়েলের জন্য) স্থাপন করা হয়েছে। এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি মহেশখালীতে প্রতিটি ৫০ হাজার টনের তিনটি ক্রুড অয়েলের ট্যাঙ্ক এবং প্রতিটি ৩০ হাজার টনের ডিজেল মজুতের ট্যাঙ্ক টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।

যেভাবে গভীর সমুদ্র থেকে জ্বালানি তেল আসবে চট্টগ্রামে

এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোড করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে সেই তেল যাবে কালারমারছড়ায় পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে তেল যাবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।

ব্যয়ের সঙ্গে বাড়ছে মেয়াদ

বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হয় এসপিএম প্রকল্প। পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অধীনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল। ২০০৮-০৯ সালের দিকে ৯৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরে তারা সরে দাঁড়ালে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের দিকে। সর্বশেষ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। দেশে বিপিসি এখন গড়ে বছরে ৬০ লাখ টন তেল আমদানি করে। এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকরা প্রায় ৪০ লাখ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.