সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নানা সময় বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এতদিন পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার সালমান এফ রহমানের পাচারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং সেই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত— নিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন দেশে সালমানের সম্পদের তথ্য চেয়ে অচিরেই চিঠি দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (বিএফআইইউ) বলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত নতুন সরকার পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবেক সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নানা পর্যায়ের নেতাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে তাদের সম্পদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। বিএফআইইউ থেকে এসব বিষয়ে অচিরেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গত ২০০৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের তদন্তে সালমান এফ রহমানের নামে বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে লন্ডনে একটি ব্যাংকে তার নামে ৩৫০ কোটি ডলারের একটি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের সন্ধান পাওয়া যায়। দেশ থেকে পাচার করা অর্থ তিনি ওই ক্রেডিট কার্ডে রেখেছিলেন।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে সালমান এফ রহমান ও তার স্বার্থসংশ্লিস্ট কোম্পানির নামে বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদন এখন বের করে পাচার তথ্য সমন্বয় করা হচ্ছে। তিনি কোন দেশে অর্থ পাচার করেছেন, তা কী কাজে ব্যবহার হয়েছে সেসব তথ্যও অনুসন্ধান করা হবে।
সূত্র জানায়, সালমান এফ দেশ থেকে বিভিন্নভাবে সম্পদ পাচার করেছেন। এর মধ্যে পণ্য আমদানির এলসি খুলে বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা শোধ করেছেন ব্যাংকের মাধ্যমে কিন্তু পণ্য দেশে আসেনি। পণ্য আমদানি করা হয়েছে, কিন্তু পণ্য দেশে আসেনি। এর মাধ্যমেই দেশ থেকে বেশি টাকা পাচার হয়েছে। সরকারি একটি ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্র“পের প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলার দেনা শোধ করা হয়। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো পণ্য দেশে আসেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বেসরকারি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি হলেও রপ্তানি মূল্যের ডলার দেশে আসেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এসব ঘটনা ধরা পড়ার পরও রাজনৈতিক চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ওই সময়ে শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে তার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। যে ব্যাংক থেকে যেভাবে খুশি ঋণ নিয়েছেন। ঋণের টাকা কখনো পরিশোধ করেননি। পরিশোধের সময় এলে আবার নতুন করে ঋণ নিয়েছেন। এভাবে শুধু সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একটি অংশ আমদানির এলসির নামে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। তার বিভিন্ন কোম্পানির নামে শিল্পের যন্ত্রপাতি আনার ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখিয়ে ও ঘোষিত পণ্যের চেয়ে কম পণ্য দেশে এনে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার করেছেন। আরও একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ওই টাকার একটি অংশ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, পাচার টাকার একটি বড় অংশ রয়েছে বেলারুশসহ কয়েকটি দেশে। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও তার পাচার করা অর্থের সন্ধান পেয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। ভারত ও নেপালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওইসব দেশেও তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, বিএফআইইউ বিশেষ করে এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তথ্য চাইবে। দেশগুলোর আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সমন্বয়ে এগমন্ট গ্রুপ গঠিত। বাংলাদেশ ওই গ্রুপের সদস্য। এর সদস্য দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে চিঠি দেবে। এগমন্ট গ্রুপ ওই চিঠি তার সদস্য দেশগুলোতে পাঠাবে। ওইসব দেশ তথ্য আবার এগমন্ট গ্রুপকে জানাবে। পরে এগমন্ট গ্রুপ তা বাংলাদেশকে দেবে। এই প্রক্রিয়ায় সালমান রহমানের পাচার করা সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমানের নামে দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকা সম্পদের বিষয়ে এখন বিএফআইইউ নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করছে। প্রাথমিকভাবে ওইসব তথ্য পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি দেওয়া হবে।