সাবেক অর্থমন্ত্রীসহ ৪ এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

0
56
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সদ্য বিদায়ী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজনের কারসাজি, দুর্নীতি ধরা পড়েছে। তারা নিজেরা লাভবান হতে সিন্ডিকেট করে বেআইনীভাবে ব্যবসা চালিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আমলে নিয়েছে। দুদক সূত্রে এই খবর জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাং নূরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম এরই মধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।

জানা গেছে, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতে এই সিন্ডিকেট সদস্য হলেন চারজন। তারা মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই চক্রের সদস্যরা হলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ।

চক্রটি চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। যার সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে বলে নানা সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, মাত্র দেড় বছরে তাদের মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে অবৈধভাবে নেওয়া বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। তারা প্রতারণা করে ২৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত ফি হিসেবে নেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। তাদের পাঠানো শ্রমিকরা কাজের অনুমতি না পাওয়ায় অনেককেই ফেরত আসতে হয়েছে।

দুদক জানায়, বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন ফেনীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তার মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড লাইসেন্স নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায়। অথচ মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট চক্রে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী পাঠায় স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড। নিজাম হাজারীর মতো আরও দুজন সাবেক সংসদ সদস্য  এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পরিবারের দুই সদস্যের রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করেছে এই চক্রে।

এর মধ্যে ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল ৮ হাজার ৫৯২ জন, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল ৭ হাজার ৮৪৯ জন এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ৭ হাজার ১৫২ জন ও মেয়ে নাফিসা কামালের মালিকানাধীন অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল ২ হাজার ৭০৯ জন শ্রমিক পাঠিয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটটি নিয়েছে কর্মী প্রতি ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

দুদক আরও জানায়, প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে যখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে, তখন কর্মী পাঠানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের দায়িত্ব পায় মালয়েশিয়া। তাদের কাছে ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাত্র ২৫টি এজেন্সির নাম নির্বাচন করা হয়। এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা ছিল না। দেখা গেছে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক ওই তিন এমপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি কর্পো‌রেশনের কাউন্সিলর এবং এ খাতের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে।

অন্যদিকে অনেক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়ে নানা জটিলতায় কাজ পাননি কিংবা কেউ কেউ ঋণ করে গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছেন। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যেখানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেরই দুর্বিষহ, মানবেতর ও অমর্যাদাকর পরিস্থিতির বিবরণ উঠে আসে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.