মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কাছে গতকাল বুধবার রাত ৯টা থেকে হঠাৎ একের পর এক মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটে। নাফ নদীর এপারে বাংলাদেশের টেকনাফ ও বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও শোনা গেছে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০-১২ দিন ধরে সীমান্তের ওপার থেকে বিস্ফোরণ শব্দ আসেনি। কিন্তু গতকাল রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় অন্তত ২০০টি মর্টার শেল ও শক্তিশালী গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এ সময় রাতে আকাশে যুদ্ধবিমান উড়ে যাওয়ার শব্দও পাওয়া গেছে। বুধবার রাতের পর আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ১০৫টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। সব মিলিয়ে ৭ ঘণ্টায় ৩০০টির বেশি মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, হ্নীলা ইউনিয়নের নাফ নদীর তীরবর্তী ১২টির বেশি গ্রাম বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে। এতে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, বুধবার রাত ৯টা থেকে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা। থেমে থেমে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল বিস্ফোরণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাঁকে জানিয়েছেন, বোমা ও মর্টার শেল হামলায় যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার হয়েছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা সাড়ে ৩ মাস ধরে সেখানকার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দুটি শহরসহ বিপুল এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু দখলের জন্য লড়ছে তারা।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ১০-১২ দিন ধরে ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। হঠাৎ গত বুধবার রাত থেকে বিকট শব্দে মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণ শোনা যাচ্ছে। তাতে এপারের লোকজন আতঙ্কে আছেন। ওপার থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে কোস্টগার্ড ও বিজিবির টহল আছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে বিজিপি ও সেনাবাহিনীর শত শত সদস্য আত্মগোপন করেন। কেউ কেউ নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে বিজিপির ২৮ জন সদস্য নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। এর আগে তিন দফায় ৭৫২ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত ৯ জুন কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ-জেটি ঘাট দিয়ে ১৩৪ জন, ২৫ এপ্রিল ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬১৮ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
টেকনাফ ২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি। রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।