প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়। গত পরশু সর্বশেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর আগে গুনে গুনে টানা ছয় ম্যাচে হার, যার মাঝপথেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলে দিয়েছেন—এতটা বাজে বিশ্বকাপ এর আগে কাটায়নি বাংলাদেশ।
এর মধ্যেই নতুন ধাক্কা—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বাঁ হাতের তর্জনীর হাড় ভেঙে কাল বিকেলে ঢাকায় ফিরে এসেছেন সাকিব। সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে লাগবে ছয় সপ্তাহ, তার মানে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট ও ঢাকায় আসন্ন দুই টেস্টের সিরিজে তিনি নেই। কিছুটা সংশয় থেকে যাবে ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরের শুরু থেকে দলের সঙ্গে থাকা নিয়েও। এই সফরে বাংলাদেশ খেলবে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি ম্যাচ।
আঙুল না ভাঙলেও সাকিব নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটি খেলতেন কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। জানা গেছে, তাঁর নাকি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল টেস্ট সিরিজে খেলবেন না। ১৪ বা ১৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্তও আগেই নিয়ে রেখেছেন। চোটে পড়ার পর তো সেটি নিয়ে আর কোনো সংশয়ই নেই।
সাকিবের এই অনুপস্থিতি বিসিবিকে আবারও ফেলে দিয়েছে অধিনায়ক–সংকটে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে কে হবেন অধিনায়ক? তা ছাড়া ভারতে যাওয়ার আগে সাকিব নিজেই বলেছেন, বিশ্বকাপের পর আর অধিনায়কত্ব করবেন না। তিনি যদি সেই সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন, তাহলে অন্য সংস্করণের ক্রিকেটের জন্যও বিসিবিকে নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হতে পারে। জানা গেছে, কোন সংস্করণে অধিনায়কত্ব করবেন, কোন সংস্করণে করবেন না বা আদৌ কোনো সংস্করণেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক থাকতে চান কি না, এসব বিষয়ে সাকিবের কাছে পরিষ্কার বক্তব্য জানতে চাইবে বিসিবি।
তবে টেস্ট সিরিজ যেহেতু দোরগোড়ায়, বিসিবি আপাতত টেস্ট অধিনায়ক–সংকটেরই সমাধান খুঁজছে। এ ক্ষেত্রে টেস্টের সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের নামটাই আগে আসা উচিত। কিন্তু লিটন নাকি ‘অধিনায়ক’ পরিচয়ের আগে ‘সহ’ শব্দটাকে ঠিক পছন্দ করছেন না। অর্থাৎ সহ-অধিনায়ক হিসেবে হঠাৎ হঠাৎ ঠেকার কাজ চালাতে তিনি আগ্রহী নন। নেতৃত্ব নিলে সেটা পুরোপুরিই নিতে চান এবং তা দীর্ঘ মেয়াদে। সে রকম হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য নেই বললেই চলে। লিটনকে অধিনায়কত্বের বলয়ে আনার পর বেশ কিছু উপলক্ষে বিসিবির উপলব্ধি— ভালো ব্যাটসম্যান হলেও লিটনের মধ্যে ঠিক ‘ক্যাপ্টেনসি ম্যাটেরিয়াল’টা নেই।
তাহলে কাকে দেওয়া হবে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজের নেতৃত্ব? মুশফিকুর রহিম অধিনায়কত্ব নিতে আগ্রহী নন। বিশ্বকাপের আগের ঘটনাপ্রবাহের পর তামিম ইকবালেরও তা নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া চোটমুক্ত হয়ে তাঁর খেলায় ফেরার সম্ভাব্য সময়ই ধরা হচ্ছে আগামী মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে। এর বাইরে দলে আর যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে ‘ক্যাপ্টেনসি ম্যাটেরিয়াল’ যে কার মধ্যে আছে, সেটাই একটা রহস্য।
এই পরিস্থিতিতে বিসিবি ‘মন্দের ভালো’ ভাবছে বিশ্বকাপের সহ–অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আর মেহেদী হাসান মিরাজকে। এ দুজনের মধ্য থেকেই হয়তো বেছে নেওয়া হবে আপৎকালীন টেস্ট অধিনায়ক। এ নিয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস অবশ্য এখনই নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলতে চাইলেন না, ‘নিউজিল্যান্ড পূর্ণ শক্তি নিয়ে আসছে। কাজেই আমাদেরও যতটা সম্ভব শক্তিশালী দল গঠন করতে হবে, যোগ্য অধিনায়ক ঠিক করতে হবে। বিশ্বকাপের পর বোর্ডে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তার আগে জেনে নেওয়া হবে অধিনায়ক হিসেবে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাকিবের চিন্তাভাবনাও।
ঢাকা