
সাংবাদিকদের প্রবেশপদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস কর্মকর্তাদের মতো নবম গ্রেডে করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করতে বলেছে কমিশন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা তাঁদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেন।
পরে যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কামাল আহমেদ বলেন, তাঁরা সাংবাদিকতায় সুরক্ষায় আইন করার সুপারিশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সুরক্ষা অধ্যাদেশের একটি খসড়াও করে দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দরকারের বিষয়েও সুপারিশ করেছে কমিশন। এ বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশপদ, অর্থাৎ নবম গ্রেডের বেতন স্কেলের সঙ্গে সংগতি রেখে সাংবাদিকদের প্রবেশপদের বেতন হতে পারে। সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য এটি হতে পারে। তবে ঢাকায় যেহেতু জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, সে ক্ষেত্রে ঢাকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ভাতা’ যোগ করা হতে পারে। সারা দেশে সাংবাদিকেরা যে বেতন পাবেন, ঢাকার ক্ষেত্রে এই ভাতা যোগ হবে। এই ভাতা ঠিক করবে সরকার ও সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন পক্ষ মিলে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন শুরু হয় ২২ হাজার টাকা দিয়ে। এর সঙ্গে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা যোগ হয়। সব মিলিয়ে এই বেতন হয় ৩৫ হাজারের বেশি।
এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হবে, তা জানতে চাইলে কামাল আহমেদ বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, সম্পাদক ও প্রকাশকের যোগ্যতা কী হবে, সেই তিনটি বিষয়েও বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা একটি শর্তও যুক্ত করেছেন। সেটি হলো, এক বছর শিক্ষানবিশ থাকার পরে পূর্ণ সাংবাদিকের মর্যাদা পাবেন। এ রকমভাবে গণমাধ্যম নিয়ে আরও বিভিন্ন সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশা করি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার সবাই এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে।’

গত বছরের ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে এই ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্য হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের উপসম্পাদক টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন।
গত নভেম্বরে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল, যেগুলোর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ৩১ মার্চ। এর আগে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।