সরকার ১০০ টাকা লিটার দরে ধানের কুঁড়ার তেল বিক্রি করবে

0
179
ধানের কুঁড়ার তেল

পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৮০ কোটি টাকায় ৫০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান অয়েল (ধানের কুঁড়ার তেল) কিনবে। প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৬০ টাকা। স্বল্প আয়ের এক কোটি পরিবারের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল বিক্রি করা হচ্ছে সে তালিকায় ঢুকবে এ তেল।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠকে তেল কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বৈঠকের পর জানানো হয়, কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে রাইস ব্র্যান বা কুঁড়ার তেল কেনা হচ্ছে। যশোরের মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস লিমিটেড এবং ঢাকার মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে ২৫ লাখ লিটার করে মোট ৫০ লাখ তেল কেনা হবে। দুটি কোম্পানিই দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন বলে জানা গেছে।

বাজারে সয়াবিন তেলের চেয়ে রাইস ব্র্যান অয়েলের দাম একটু বেশি। প্রচলিত ভোজ্যতেলের চেয়ে এটি তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর। তাই আমরা এবার এ তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সাশ্রয়ী দামেই অর্থাৎ সয়াবিনের দামেই তা বিক্রি করা হবে।মো. আরিফুল হাসান, চেয়ারম্যান, টিসিবি।

টিসিবির চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনার মধ্যে ২৮ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৬ লিটার ভোজ্যতেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত ২২ কোটি ৫১ লাখ ৩৭ হাজার ৬০২ লিটার ভোজ্যতেল কেনার চুক্তি হয়েছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ দফায় ৫০ লাখ লিটার তেল কিনছে সরকার। অর্থবছর শেষ হওয়ার আর বাকি আছে এক সপ্তাহ।

জানতে চাইলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের চেয়ে রাইস ব্র্যান অয়েলের দাম একটু বেশি। প্রচলিত ভোজ্যতেলের চেয়ে এটি তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর। তাই আমরা এবার এ তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সাশ্রয়ী দামেই অর্থাৎ সয়াবিনের দামেই তা বিক্রি করা হবে।’ রাইস ব্র্যান কেনার ক্ষেত্রে ডলার বিদেশে না যাওয়া এবং দেশীয় কোম্পানিকে উৎসাহিত করা—এ দুটো বিষয়ও বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানান টিসিবি চেয়ারম্যান।

অর্থবছরের পরিকল্পনার চেয়ে কম ভোজ্যতেল সংগ্রহ হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হাসান বলেন, ‘পরিকল্পনাটা আমরা সব সময় একটু বাড়িয়েই করে থাকি।’

জানা গেছে, মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলসের কাছ থেকে দুই লিটারের পেট বোতলে করে ২৫ লাখ লিটার তেল সরবরাহের জন্য প্রস্তাব পায় টিসিবি। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে প্রতি লিটারের দাম ১৭৫ টাকা চেয়েছিল। অন্যদিকে মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড প্রতি লিটার তেলের দাম চেয়েছিল ১৭৫ দশমিক ৫০ টাকা।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রস্তাবিত দর পর্যালোচনা করে প্রতি লিটারের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে উভয় দরদাতাকে জানালে তারা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়। এরপরই বিষয়টি ক্রয় কমিটিতে আসে। তবে সরকার ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে মানুষের কাছে ১০০ টাকা লিটার দরে কুঁড়ার তেল বিক্রি করবে।

যোগাযোগ করলে মজুমদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার আজ মুঠোফোনে জানান, তাঁরা ভারতে এ তেল রপ্তানি করে আসছেন। তবে ডলারের দর বিবেচনায় দেখা যায় বাংলাদেশে এখন ভারতের তুলনায় দাম ভালো। তাই টিসিবির কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়া থেকে এক লিটার রাইস ব্র্যান বা কুঁড়ার তেল হয়। ধান থেকে চাল তৈরি তথা ধানের তুষ ছাড়ানোর সময় ৭–৮ শতাংশ কুঁড়া পাওয়া যায়। সেই কুঁড়া থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়।

বিজ্ঞানীদের গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, অন্যান্য ভোজ্যতেলের তুলনায় ধানের কুঁড়ার তেলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক মাত্রা কম। আবার চিকিৎসকেরা বলছেন, এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অরাইজানল রয়েছে এবং এ তেল মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অরাইজানল ইনসুলিন প্রতিরোধে সহায়তা করে। সাধারণ মানুষের ধারণা, বোতলে তেলের রংটা একটু হালকা হলে ভালো হয়। কিন্তু তা করতে গেলে তেল থেকে উপকারিতা কম পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদনের ১২টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে প্রথম পাবনার ঈশ্বরদীতে রশিদ ওয়েল মিলস লিমিটেড ‘হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড’ নামের ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন শুরু করে। প্রায় একই সময়ে গড়ে ওঠে ময়মনসিংহে ‘স্পন্দন’ ব্র্যান্ডের আরেকটি কারখানা। তবে উৎপাদনের মাঠে ভালোভাবে আছে এখন বগুড়ার মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মজুমদার গ্রুপের তেলের ব্র্যান্ড ‘স্বর্ণা’। এ গ্রুপের দুই কারখানার প্রতিদিনের উৎপাদনক্ষমতা ৯০ থেকে ১০০ টন।

তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে দৈনিক কুঁড়ার চাহিদা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টন। দেশের চালকল থেকে বছরে ৩৭ লাখ টনের বেশি কুঁড়া উৎপাদিত হয়। অন্যদের কাছ থেকে পরিশোধন করিয়ে নিয়েও এই তেল বাজারজাত করছে কয়েকটি বড় কোম্পানি। যেমন এসিআই। এসিআইয়ের রাইস ব্র্যান তেলের নাম ‘নিউট্রিলাইফ’। বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের ব্র্যান্ড ‘ফরচুন’।

ব্র্যান্ডগুলো বলছে, কুঁড়ার তেল যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি সাশ্রয়ীও। এক লিটার সয়াবিন তেলে যে খাবার রান্না করা যায়, তা পৌনে এক লিটার কুঁড়ার তেলে করা সম্ভব। এদিকে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থার (বিসিএসআইআর) এক গবেষণাও বলছে, ভোজ্যতেলে যেসব খাদ্যগুণ থাকা উচিত, তা জলপাই তেলের পর সবচেয়ে বেশি রয়েছে কুঁড়ার তেলে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.