পাহাড় সমান প্রত্যাশা নিয়ে গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্ণ হলো আজ। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি কতটুকু? সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, প্রশাসন ও পুলিশের রদবদলকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
তারা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সরকার। তাদের ধারণা, নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করলে অস্থিরতা কমতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, তিন মাসের মধ্যে একেবারে চমক লাগানোর মতো সাফল্য নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঠামোগত রূপ দেয়ার একটা চেষ্টা আছে।
আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কিছু কিছু ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন কমিশনগুলো, দায়মুক্তি আইন স্থগিত করা, সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত।
তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ ও সংখ্যালঘু ইস্যু মোকাবেলায় সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সংখ্যালঘু, জাতিগত বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নিরাপত্তাবোধটা যাচ্ছে না। এসবকে অজুহাত করে ভারত বিজেপিকে দিয়ে একটা চেষ্টা করছে, যেহেতু তারা এই পরিবর্তনে সন্তুষ্ট না। ট্রাম্পও ব্যবহার করেছেন এটি। তাই এসব থামাতে সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলে এগুলো তো হবে না।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, কোনো একটা থানা থেকে অনুরোধ করা হলো, অমুক জায়গায় একটা গণ্ডগোল হচ্ছে, আপনারা যান, থামানোর চেষ্টা করেন, এই কাজটা কিন্তু পুলিশ উদ্যোগ নিয়ে করে না। যে কারণে সামরিক বাহিনীকে পাশে রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারাও যে খুব সক্রিয় তা দেখছি না।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিয়েও সন্দিহান বিশ্লেষকরা। যদিও তারা মনে করেন, এর বড় দায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, প্রতিদিনকার সবজি, চাল, ডাল, তেল এসব জিনিস কিনতে যে অর্থ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের হাতে আছে, তাতে সবাই খুব কষ্টে আছেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মূল্যস্ফীতি ও জিনিসপত্রের দাম, এক্ষেত্রে সরকারের কোনো সাফল্য আমরা দেখি না। সরকার যে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে তা দেখছি না।
তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাবান নানা পক্ষ চাপ দিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। এজন্য সরকার নানা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এখানে তো বিভিন্ন ইন্টারেস্ট গ্রুপ কাজ করে। এক গ্রুপ বলছে, নিষিদ্ধের কথা; আরেক গ্রুপ বলছে আমরা নিষিদ্ধের বিপক্ষে। পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবায়নে দুর্বলতা রয়েছে।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, অনেক সামাজিক গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। ফলে ক্ষমতার একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। সরকারের যে শ্লথ গতি দেখছি, এর পেছনের কারণ অন্য স্টেকহোল্ডাররা কী বলবে, এ নিয়ে ভাবনা। এটা করতে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।
এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন কবে হবে বা সংস্কার কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, এর রূপরেখা দিলে অস্থিরতা কমবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে সার্চ কমিটির কাজটা ঠিকঠাক মতো হবে। নির্বাচন সামনে, এজন্য যে রোডম্যাপ ও প্রস্তুতি, আমরা ধারণা সে প্রস্তুতিটা সরকার শিগগিরই শুরু করবে।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, তারা যদি বলে দিতো, অমুক বছরের অমুক সময়ের মধ্যে আমরা এই কাজটি করবো, সে রকম কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় অনেক রকম ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে।
আলমগীর স্বপন