সরকারের পাশে চীনকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা

0
187
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও সাম্যবাদী দল (এমএল)

চীন সফরে গিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় চীনকে পাশে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক তিন বামপন্থী দলের নেতারা। জবাবে চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ তারা পছন্দ করছে না।

চীন সফর করে দেশে ফেরার পর প্রতিনিধিদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং সাম্যবাদী দলের (এমএল) শীর্ষ নেতারা গত ২৪ থেকে ৩০ জুলাই চীনের কুনমিং সফর করেন। এই সফরে নিজ নিজ দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তাঁদের বাইরে তিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আরও নয়জন সফরসঙ্গী ছিলেন।

প্রতিনিধিদলের সূত্র জানায়, সফরে প্রতিনিধিদলের প্রত্যেক সদস্যের যাবতীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চীনা কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখানকার বেশ কিছু আধুনিক কারখানা পরিদর্শনে নেওয়া হয় তাঁদের। ঘুরিয়ে দেখানো হয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের জন্য বেইজিং থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রতিনিধিরা কুংমিং আসেন। তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটি দলের আলাদা আলাদা বৈঠক হয়। এরপর সব দলের প্রতিনিধি ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা একসঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন এবং খোলামেলা আলোচনা করেন। এ ছাড়া ইউনান প্রদেশের ভাইস গভর্নর ও আশপাশের প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে কুংমিংয়ে বৈঠক হয়।

প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, এর আগেও ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও সাম্যবাদী দলের শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে চীন সফর করেছেন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে তাঁরা চীন সফর করেন। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এককভাবে এরপরও চীন সফর করেছেন।

সফরের আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের মূল কথা ছিল, সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। চীনা নেতারাও মনে করেন, বাংলাদেশে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আরও বহুলাংশে বেড়ে যাবে। তাই চীন বাংলাদেশের টেকসই অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা চীনাদের বুঝিয়েছেন যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার মতো নেতা দরকার। তাঁর বিকল্প বাংলাদেশে এখনো কেউ তৈরি হননি। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাও আছে। এ বিষয়ে চীনেরও দ্বিমত নেই, এসব ধারণা পেয়েছেন তিন দলের নেতারা।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপের জোরালো বিরোধিতা করছি। চীনারাও জানিয়েছেন, পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ তারা পছন্দ করছেন না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের দেওয়া নৈশভোজে বাম নেতাদের একজন এমন অভিমত ব্যক্ত করেন যে যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মিশনে নেমেছে। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকাতে তারা বাংলাদেশে নিজেদের মতো করে দুর্বল নেতৃত্ব বসাতে চায়। এ বিষয়ে চীনা নেতারা জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাঁরা হস্তক্ষেপ করবেন না। তবে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপের বিষয় আলোচনায় এসেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের তৎপরতা মোটেও গণতন্ত্র বা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নয়। এর পেছনে তাদের সামরিক স্বার্থ জড়িত। চীনারাও বলেছেন, পশ্চিমাদের এ ধরনের তৎপরতার পেছনে যে ভিন্ন কিছু থাকে, সে বিষয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ পছন্দ করেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.