শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করে বিলে বোরো ধানের চাষ করেন কৃষকেরা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার চককসবা বিলের ৩২০ একর সরকারি সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। খননযন্ত্রের সাহায্যে রাতের অন্ধকারে বিলের নিচু এলাকায় বাঁধ দিয়ে কুয়া খনন করা হয়েছে। এতে চককসবা বিলের ভেতর দিয়ে উঁচু এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খাল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ছোটমুল্লুক, বড়মুল্লুক, দোডাঙ্গী, চকদেবীরাম, কালিগ্রামসহ কয়েকটি বিলের পানি এই খাল দিয়ে নিচু এলাকায় চলে যায়। শুকনো মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করে বিলে বোরো ধানের চাষ করেন কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের অভিযোগ, উপজেলার নলতৈড় গ্রামের আবদুর রব, আলাউদ্দিন মণ্ডল ও মোজাম্মেল হক, কালিনগর গ্রামের আয়েন উদ্দিন, তছের মোল্লা ও ফরিদুল ইসলামসহ কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি চককসবা বিলের নিচু এলাকায় সরকারি সম্পত্তিতে খননযন্ত্র দিয়ে কুয়া (ছোট পুকুর) খনন করছেন। বিলের সরকারি সম্পত্তি দখল করার উদ্দেশ্যে তাঁরা এসব করছেন। এসব কুয়ার চারপাশে উঁচু বাঁধের কারণে বিলের উজান এলাকার জমির পানি আর নিষ্কাশন হতে পারবে না। জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ওই সব জমির তিন ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। আর বিলের ভাটি অংশে আর পানি জমবে না। বিলের নিচু অংশে বছরে সাত-আট মাস পানি থাকে। এই বিলের পাশে ১৩টি গ্রামের প্রায় ১৫০ জেলে পরিবার মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
এদিকে চককসবা বিলের সরকারি সম্পত্তি দখলের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভার সভাপতি ইউএনওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দেন কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ও তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুল। তাঁরা বলেন, বিলে মাছ শিকার করতে না পারলে ১৩ গ্রামের সব জেলে পরিবার পথে বসে যাবে। আর বিলের উজান অংশে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১৫০ একর জমিতে ফসল আবাদ ব্যাহত হবে।
নলতৈড় গ্রামের মৎস্যজীবী মাহবুব আলম বলেন, ‘বসতভিটা ছাড়া আমার কোনো ফসলি জমি নেই। বছরের অন্তত আট মাস বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। অন্য সময়ে শ্রমিকের কাজ করতে হয়। বিলটি দখল হয়ে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
চককসবা বিল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, বিলটি বেদখল হলে তাতে আর মাছ শিকার করতে পারবেন না জেলেরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা পথে বসবেন। জেলেদের জীবন–জীবিকার স্বার্থে বিলটি দখলমুক্ত করার দাবি করেন তিনি।
খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বাধা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আবদুর রব, আলাউদ্দিন মণ্ডল ও ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিলের যেসব অংশে কুয়া খনন করা হচ্ছে, ওইগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন। মাছ চাষের জন্য কুয়া খনন করা হচ্ছে। আমরা কোনো সরকারি সম্পত্তি দখল করিনি। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, চককসবা বিলে সরকারি সম্পত্তি দখলের বিষয়টি রেজল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সরেজমিনে তদন্ত করে বিলটি দখলমুক্ত করতে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।