গাবতলীর হাটে এখনো পর্যাপ্ত গরু, ক্রেতা কম

0
109
হাটে এখনো কোরবানির অনেক পশু রয়ে গেছে

রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। হাটে এখনো পর্যাপ্তসংখ্যক কোরবানির পশু রয়ে গেছে। বিপরীতে হাটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কম। আজ বুধবার রাত সোয়া আটটা পর্যন্ত রাজধানীর অন্যতম পশুর হাট গাবতলীতে অবস্থান করে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

আজ ভোর থেকেই রাজধানীতে থেমে থেমে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে সকালে হাটটিতে ক্রেতার তেমন আনাগোনা ছিল না। তাই অনেক বিক্রেতা হাট থেকে বেরিয়ে রাস্তায়ও গরু-ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তারাঁ কয়েক দিন ধরে যে দাম চাইছিলেন, আজ সে তুলনায় দামও কমিয়ে দেন।

তবে দুপুরের পর বৃষ্টি কমে এলে হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিকেল পাঁচটার দিকে গাবতলী হাটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। ক্রেতারা পছন্দের গরু কিংবা খাসি বাছাই করছিলেন। চলছিল দর-কষাকষি। বিক্রেতারাও অযৌক্তিক দাম না বলে যে দামের মধ্যে বিক্রি করবেন, সে রকম দামটাই বলছিলেন।

শ্যামলীর বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন মাঝারি আকারের একটি গরু কেনেন। গরুটির দাম পড়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গরুটি কেনার সময় তাঁকে বিক্রেতার সঙ্গে খুব বেশি সময় দরদাম করতে দেখা যায়নি। গরু কেনা শেষে তিনি বলেন, মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরের বছিলা, হাজারীবাগ, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং হাটে গিয়েছিলেন। সেদিন এমন আকারের গরুগুলোর দাম চাওয়া হয়েছিল আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। গাবতলী হাটেও এমনই দাম ছিল। আজকে এসে কমে পেয়েছেন, পছন্দ হওয়ায় কিনেও নিয়েছেন।

রাত পৌনে আটটার দিকে সোয়া আটটা পর্যন্ত শেষবারের মতো গাবতলী হাটের পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। এ সময় হাটের স্থায়ী অংশের গরু রাখার জায়গাগুলোতে অনেক গরু অবিক্রীত অবস্থায় রয়ে যেতে দেখা গেছে। পাইকারদের অনেকেই ওই সময়ে নিজেদের মতো গল্প-আড্ডায় ব্যস্ত ছিলেন। অনেকে আবার ক্রেতার উপস্থিতি নিয়ে হতাশার কথা জানান।

ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা
ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা

গাবতলী হাটের নিয়মিত পাইকার রাশেদুল মিয়া জানান, ‘হাটে সারা বছরই গরু নিয়ে আসি। কোরবানির সময় এই হাটেই প্রতিবছর গরু আনি। এবারও ২৭টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯টি।’ তিনি বলেন, এখনই যেভাবে ক্রেতা কমে গেছে, তাতে মনে হচ্ছে না বাকি রাতটুকুতে গরুগুলো বিক্রি হবে। এ বছর ক্রেতা অনেক কম।

অনেক ক্রেতা গরু রাখার নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে এসে গাবতলীর হাটের হাসিলঘরের সামনে গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। হাটে ক্রেতাদের ঢুকতে দেখলেই ডেকে নিজের গরুটির দাম বলছিলেন। কোনো কোনো পাইকারকে আবার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার, একটাই গরু আছে। কেনা দামে ছাইড়া দিমু।’

গাবতলীর হাটের হাসিলঘরের সামনে গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বিক্রেতারা
গাবতলীর হাটের হাসিলঘরের সামনে গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বিক্রেতারা

হাসিলঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পাইকার কুষ্টিয়ার রমজান আলী বলেন, ‘ক্রেতা কম। অনেক ক্রেতা হাটের ভিতরেই যাচ্ছে না। কোনো উপায় না দেইখা সামনে নিয়া আসছি। ব্যবসার যে অবস্থা, খালি হাতে ঘরে ফিইরা যাওন ছাড়া গতি নাই।’

গাবতলীতে স্থায়ী হাটের সীমানা ছাড়িয়েও আশপাশের খালি জায়গায় গরুর হাট বসে। এসব জায়গায় সাধারণত শুধু যাঁরা কোরবানির সময় পশু নিয়ে আসেন, ওই পাইকারেরা গরু রাখেন। এসব অংশে গিয়েও অনেক গরু দেখা গেছে।

গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে এমন অংশে বিক্রির জন্য গরু রেখেছিলেন জামালপুরের ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। তিনি গত শনিবার হাটটিতে ২২টি গরু নিয়ে আসেন। তাঁর আনা গরুগুলো ছিল মাঝারি আকারের। আজ রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি ১৭টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন।

বিল্লাল জানান, প্রথম তিন দিন মাত্র ছয়টি গরু বিক্রি হয়েছিল। ক্রেতারা লাভজনক দাম বলছিলেন না। আজকে সকালের পরিস্থিতি দেখে আর ঝুঁকি নেননি। আজকে বিক্রি হওয়া গরুগুলো কোনোটি মোটামুটি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাভ রেখে, কোনোটি আবার কেনা দামেই বিক্রি করে দিয়েছেন।

গরুটি নিয়ে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমিনবাজার সেতুর কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পাবনার চাটমোহর থানা থেকে আসা খামারি আবদুল লতিফ
গরুটি নিয়ে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমিনবাজার সেতুর কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পাবনার চাটমোহর থানা থেকে আসা খামারি আবদুল লতিফ

গাবতলীর হাটে পর্যাপ্ত গরু অবিক্রীত থাকার পাশাপাশি আকারে বড়—এমন গরু একেবারেই কম বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে না পেরে কোনো কোনো খামারিকে গরু নিয়ে এলাকার উদ্দেশে রওনা দিতেও দেখা গেছে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিজের আনা গরুটি নিয়ে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমিনবাজার সেতুর কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পাবনার চাটমোহর থানা থেকে আসা খামারি আবদুল লতিফ। ওই সময়ও যাঁরাই দাম বলছিলেন, বিক্রির আশায় তিনি দরদাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রায় ১৪ মণ ওজনের গরু জানিয়ে আবদুল লতিফ বলেন, ‘এই গরুর জন্য দাম বলে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। তবে গতকাল মঙ্গলবার এক ক্রেতা ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলেছিলেন। কিন্তু আরেকটু লাভের আশায় তখন বিক্রি করিনি।’

হাটে গরুর পাশাপাশি খাসিও অনেক রয়ে গেছে। তবে খাসি কিংবা ছাগল বিক্রির পাইকারেরা বলছেন, বিক্রি বেশ ভালোই হয়েছে। যদিও শেষ সময়ে এসে অনেক ছাগল কেনা দামেও বিক্রি করে দিতে হয়েছে।

অবশিষ্ট দুটি খাসি বিক্রির আশায় পাইকার জালাল শেখ
অবশিষ্ট দুটি খাসি বিক্রির আশায় পাইকার জালাল শেখ

রাজবাড়ীর পাংশা থেকে ৬০টি খাসি নিয়ে এসেছিলেন পাইকার জালাল শেখ। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত এর ৪৩টি বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘১২ হাজার থেকে শুরু করে ২২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করেছি। কোনোটা লাভ হয়েছে, কোনোটি কেনা দামেই বেচে দিয়েছি।’ তাঁর কাছে তখনো প্রায় ২২ কেজি করে ওজনের দুটি খাসি ছিল। দুটির জন্য দাম চাইছিলেন ৬০ হাজার টাকা। তবে ক্রেতারা সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার টাকা দাম বলেছেন বলে জানান তিনি।

গাবতলীর হাটের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন মো. নাছির। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ৩৬ বছর ধরে এই হাটের সঙ্গে যুক্ত। আজ  সন্ধ্যায় তিনি হাটটিতে ওয়াচ টাওয়ারে বসে মাইকে বিভিন্ন ঘোষণা দেওয়ার কাজ করছিলেন।

মো. নাছির বলেন, ‘এ বছর এখনো হাটে অনেক গরু রয়ে গেছে। এমনটা গত কয়েক বছরে খুব বেশি একটা দেখিনি।’ হাটে আনা বেশির ভাগ বড় গরুই এবার ফেরত যাবে বলেও জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.