সমাজ আমাকে চিহ্নিত করতে শুরু করে একজন খারাপ নারী হিসেবে: বাঁধন

0
29
আজমেরী হক বাঁধন

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থেকে শুরু রাজপথে সরব ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব ছিলেন অভিনেত্রী। সবসময় সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। এবার পোশাক নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেত্রী। জানালেন একসময় সমাজ তাকে খারাপ অভিনেত্রী হিসেবে চিহ্নিত করে।

এই অভিনেত্রীব বলেন, আমার দ্বিতীয় বিচ্ছেদের পর নিজেকে শুধু ব্যর্থই মনে হয়নি, সমাজ আমাকে চিহ্নিত করতে শুরু করে একজন খারাপ নারী হিসেবে। আর সেটাই আমাকে ভেঙে দেয়। তখন থেকে নিজের অধিকার দাবি করতে শুরু করি, নিজের স্বাধীনতার জন্য লড়তে শুরু করি।

বাঁধন বলেন, একটা সময় আমিও একটি সুন্দর-সাধারণ মেয়ে ছিলাম, সে সময় এমন পোশাক-আশাক পরতাম, যা সমাজ প্রত্যাশা করত। বাবা-মায়ের পছন্দের পোশাক পরতাম, যেমনটা সমাজ চায়—সেভাবেই চলতাম। কখনো জিন্স পরিনি, সমাজের চাপেই। কারণ জিন্স নাকি খারাপ মেয়েরা পরত!

এরপর বাঁধন উল্লেখ করেন, আমি ঠিক করেছিলাম, আমি হবো সমাজের চোখে পারফেক্ট মেয়ে—যেমনটা সমাজ চায়, তেমনই নিজেকে গড়ে তুলব। কিন্তু এরপর আমার পুরো পৃথিবীটাই ভেঙে পড়ল। একটা ট্রম্যাটিক সংসার জীবন থেকে বাঁচতে আমি বিচ্ছেদ চাই; যা আমাকে রিহ্যাব অবধি নিয়ে যায়। এর পরই আমি লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নিই, ২০০৬ সালে। আর তার মাধ্যমেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই। তবে শুধু নারী হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবে।

আজমেরী হক বাঁধন

বাঁধন বলেন, তবু তখনও আমার ভেতরে ছিল সেই ইচ্ছা। সমাজ যেন আমাকে সেরা নারী হিসেবে মেনে নেয়, আমাকে দেখে সম্মান করে। তবে পার্থক্য ছিল—আমি জিন্স পরতাম। এমন পোশাক পরতাম, যেখানে আমার ত্বক দেখা যেত। এমন পোশাক, যা ভালো মেয়েদের পরা উচিত নয়; যা মনে করত সমাজ।
বিজ্ঞাপন

এক ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বাঁধন লেখেন, একদিন এক বন্ধু ফোন করে বলল, তুমি কত সুন্দর করে কথা বলো, এত ভালো কাজ করছ—কিন্তু তোমার আরেকটু ঢেকে পোশাক পরা উচিত। আমি শুধু হেসে ফেললাম।

বাঁধন লেখেন, একবার আমি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে গিয়েছিলাম স্লিভলেস ব্লাউজ পরে। চ্যানেলের টিম তখন আমাকে বলেছিল, কাঁধ ঢাকতে যেন চুলটা সামনে রেখে দিই। তারা আমাকে লেকচারই দিল। বছরের পর বছর ধরে আমি অসংখ্য পরামর্শ শুনে এসেছি এমন, একজন মা হিসেবে, একজন ‘বুদ্ধিমতী নারী’ হিসেবে কিংবা একজন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হিসেবে—আমার কী পরা উচিত, কিভাবে পরা উচিত।

কিছুটা জেদ করে বাঁধন লিখলেন, কিন্তু জানেন কি? আমি আর এসব একটুও পরোয়া করি না। আমি এখন স্বাধীন। আমার কী পরা উচিত, কী বলা উচিত, কী ভাবা উচিত বা কিভাবে জীবন কাটানো উচিত—এটা কেউ আমাকে বলে দিতে পারে না। এটা শুধুই আমার একার সিদ্ধান্ত।

সর্বশেষ বাঁধন লেখেন, এই ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ আমাকে খুব কষ্ট দেয়—আর ঘৃণাও লাগে। কিন্তু এটাই আমাদের, নারীদের, প্রতিদিনের বাস্তবতা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.