সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ মিলে সুন্দর দেশ গড়ার আহ্বান সেনাপ্রধানের

0
11
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে আজ শুক্রবার বিকেলে পবিত্র কঠিন চীবর দান উৎসব ও জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

সব ধর্ম, ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু-খ্রিষ্টান, সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চান বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, ‘অন্য যেসব ধর্ম আছে, সব ধর্ম, জাতি ও গোষ্ঠী সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গঠন করতে চাই। এখানে সুন্দরভাবে শান্তিতে বসবাস করতে, দেশ ও জাতির উন্নতি করতে চাই।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে পবিত্র কঠিন চীবর দান উৎসব ও জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘যখন আজান হচ্ছিল, তখন তাঁরাই বললেন যে কিছুক্ষণ পরে শুরু করি, আজানটা শেষ হয়ে যাক। এই যে ধর্মীয় বোঝাপড়া (আন্ডারস্ট্যান্ডিং), ধর্মীয় সম্প্রীতি, মমত্ববোধ দেখিয়েছেন, এটা অতুলনীয়।’

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে আজ শুক্রবার বিকেলে পবিত্র কঠিন চীবর দান উৎসব ও জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরা উৎসব পালনে সেখানে সমবেত হয়েছেন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, এভাবেই প্রতিনিয়ত, প্রতি সময় আপনারা আপনাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করবেন। সুখে-শান্তিতে থাকবেন। এ জন্য যা কিছু করতে হয়, আমরা সেটা করব। এর আগে দুর্গাপূজাতেও আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি। খুব সুন্দরভাবে তা উদ্‌যাপন করা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা যখনই যে ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা চাইবেন, আমরা সেটা প্রদান করব।’

বৌদ্ধধর্মের মূলমন্ত্র শান্তি ও সম্প্রীতি উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘হাজার হাজার বছর ধরে আমরা এখানে আছি, এটাই আমাদের ঐতিহ্য। সবচেয়ে পুরোনো ধর্ম হচ্ছে সনাতন ধর্ম, তারপরে বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাব হয় আড়াই হাজার বছর পূর্বে, পরবর্তীতে খ্রিষ্টধর্ম আসে এবং ইসলাম সবচেয়ে শেষে আমাদের দেশে আসে। এই প্রধানতম চার ধর্ম, আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে চাই। একে অপরকে সাহায্য করব, সহমর্মিতা প্রদর্শন করব; কারও কোনো অসুবিধা হলে, বিপদে পড়লে সাহায্য করব। এভাবে একটা সম্প্রীতির একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই। সবাই মিলে ভালো থাকতে, সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই।’

পবিত্র কঠিন চীবর দান উৎসব ও জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের হাতে একটি বুদ্ধমূর্তি তুলে দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের উদ্দেশে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, এখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের দেখে ভালো লাগছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে দেখে। তাঁরা এ দেশে অনেক বৌদ্ধমন্দির তৈরিতে আর্থিক সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের জন্য এটা চমৎকার অবদান। এখানে ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারও আছেন। তাঁরাও বাংলাদেশে শান্তি-সম্প্রীতির জন্য অবদান রাখছেন।

তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘পার্বত্য জেলায়, বিশেষ করে যেহেতু এখানে আমাদের একটু শান্তি-সম্প্রীতির কিছুটা ঘাতটি আছে, সেদিকটা পুষিয়ে নিতে চাই। একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। পাহাড়ে সবাই পাহাড়ি-বাঙালি যেন একসঙ্গে বসবাস করতে পারি।’

সেনাপ্রধান নিজেও পার্বত্য জেলায় দায়িত্ব পালন করে এসেছেন জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার মমত্ববোধ-ভালোবাসা আছে। পার্বত্য জেলার শান্তির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমাকে যদি বলা হয়, আমি সেটা করব। পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি, সবাই যেন সুন্দরভাবে বাস করতে পারি, সেই চেষ্টা আমার জারি থাকবে।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনাদের (পাহাড়ি জনগোষ্ঠী) একটা ভাষা–সংস্কৃতি আছে। আমরা এটাকে সম্মান করতে চাই। সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবন–বৈচিত্র্য, এটাকে আমরা রক্ষা করতে চাই। এটা আমাদের বিশাল বড় সম্পদ। এগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য যা কিছু করতে হয়, আমরা করব।’

পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন ও পাহাড়িদের শিক্ষার সুযোগ তৈরির বিষয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, পার্বত্য জেলাগুলো চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যসংবলিত। এখানে পর্যটকদের গন্তব্য হতে পারে। পর্যটকদের আকর্ষণ করবে, এমন অনেক কাজ করার আছে। আর সেখানে স্কুল-কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় করলে পাহাড়ি ভাইবোনেরা সুন্দরভাবে সেখানে পড়াশোনা করতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেশ-বিদেশে তাঁদের দক্ষতা নিয়ে ছড়িয়ে যেতে পারবেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ন্যুয়েন মান কুঅং এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.