ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর মতো সিনেমা বা ‘মারকিউলিস’, ‘সাড়ে ষোলো’র মতো আলোচিত সিরিজে কাজ করেছেন আফিয়া তাবাসসুম, বন্ধুরা যাঁকে বর্ণ বলেই চেনেন বেশি। গত বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পাওয়া ভিকি জাহেদের ‘রুমি’ সিরিজের পর আর পর্দায় তাঁকে দেখা যায়নি। মাঝের সময়ে কাজের খবর জানতে চাইলে বলতেন, ‘কিছু করছি না, ব্রেক নিয়েছি।’ ‘অজানা শহরে’ দিয়ে সেই বিরতি ভাঙলেন বর্ণ। নাসের হাসিব সিদ্দিকীর ১১ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটি তৈরি হয়েছে ঘুরতে গিয়ে ভিন্ন জগতের দুই অপরিচিত মানুষের কাছে আসার গল্প নিয়ে। ১৪ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে মুক্তির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বল্পদৈর্ঘ্যটি নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন, কেউ লিখেছেন বর্ণর অভিনয়ের প্রশংসা করে।

সে সূত্রেই আলাপ। জানালেন, মনমতো কিছুই হচ্ছিল না; তাই এই স্বেচ্ছাবিরতি। ‘কাজের ক্ষেত্রে যে ধরনের চিত্রনাট্য আশা করছিলাম, পাচ্ছিলাম না। নিজেও নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি ছিলাম না। মনে হলো যদি বিরতি নিই, তাহলে হয়তো কাজের প্রতি আবার আগ্রহ ফিরে পাব। এক বছর কোনো কাজ করিনি,’ বলছিলেন বর্ণ।
জীবনযাত্রার গতি একটু কমিয়ে দিয়েছি। কিছু একটা করেই ফেলতে হবে, এই তাড়না আর হয় না। কাজ বা ব্যক্তিজীবন নিয়ে এখন সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। ধীর জীবনযাপনও যে উপভোগ করা যায়, সেটা বুঝতে শিখেছি।
নতুন উপলব্ধি
বিরতির সময়টা বাসাতেই ছিলেন বর্ণ। দীর্ঘ সময় মা-বাবা, বোন, ছোট ভাগনির সান্নিধ্য জীবনদর্শনেও বদল এনেছে। বর্ণ বলছিলেন, ‘বাবার চোখে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে, পুরোটা সময় পাশে ছিলাম। ছোট ভাগনির সঙ্গে অনেক সময় কেটেছে। এই সময়ে আমি আরও পরিণত হয়েছি। আগে বেশি ছুটে বেড়াতাম, এখন সময় নিয়ে কাজ করতে পারি। সব মিলিয়ে জীবনযাত্রার গতি একটু কমিয়ে দিয়েছি। কিছু একটা করেই ফেলতে হবে, এই তাড়না আর হয় না। কাজ বা ব্যক্তিজীবন নিয়ে এখন সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। ধীর জীবনযাপনও যে উপভোগ করা যায়, সেটা বুঝতে শিখেছি।’

বর্ণ মনে করেন, পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানো, জীবন নিয়ে নতুন উপলব্ধি তাঁকে অভিনেত্রী হিসেবেও সাহায্য করবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বললেন, ‘মা-বাবার অনেক বিষয়ে আগে বিরক্ত হতাম। মনে হতো, কেন সব বিষয় নিয়ে এত উদ্বিগ্ন, কিন্তু এখন সেই উত্তরগুলো খুঁজে পাচ্ছি। আমার আঙুল একটু কেটে গেলেও মা দৌড়াদৌড়ি শুরু করতেন, বুঝতাম না সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত উদ্বেগের কারণ কী। কিছুদিন আগে মায়ের আঙুল একটু কেটে যায়, সেটা দেখে আমার কী দৌড়াদৌড়ি…। এসব ছোট ঘটনা আসলে অনেক বড় প্রশ্নের উত্তর দেয়। যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে এসব উপলব্ধি, পর্যবেক্ষণ নিশ্চিভাবেই কাজে আসবে।’

‘অজানা শহরে’
‘অজানা শহরে’ ক্লোজআপ নিবেদিত ও ইন্ডি রিলস প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্য। বড় হওয়ার সময় থেকেই ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের নাটকগুলো টিভিতে দেখতেন, কখনো এই প্রকল্পের সঙ্গী হবেন, এমন স্বপ্নও ছিল। পরে সেটা হয়েছিল কিন্তু নানা কারণে সে প্রকল্প মুক্তি পায়নি। এবার সুযোগ পেয়ে তাই আর মিস করতে চাননি।
‘আগের প্রকল্পটি প্রচারিত না হওয়ায় একধরনের হতাশা ছিল, নতুন প্রকল্পটির চরিত্রটিও ভিন্নধর্মী—সব মিলিয়ে রাজি হয়ে যাই,’ বললেন বর্ণ। মুক্তির পর সহকর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছেন। তবে তাঁর বেশি কৌতূহল সাধারণ দর্শকের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। নিয়মিত ইউটিউবের মন্তব্যের ঘরে ঢুঁ মারেন বর্ণ। সেখানে কেউ তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন, কেউ আবার বলেছেন, গড়পড়তা। সবই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। এক দর্শক মন্তব্য করেছেন, ‘আগে দেশে নায়িকা মানেই লম্বা চুল, ফরসা দেখতে হতেই হবে; এই প্রকল্প সেই প্রথা ভেঙেছে দেখে ভালো লাগছে।’ এ মন্তব্য বর্ণকে প্রেরণা জুগিয়েছে, নতুন কাজ করতে আগ্রহী করে তুলেছে।

বিরতির পর
অভিনয় ছাড়া নিয়মিত মডেলিং করেন বর্ণ। সামনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মডেল হিসেবে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে। অভিনয়ের নতুন খবর এখনো নেই। তবে এবার ঠিক করেছেন, সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে বাজিয়ে দেখবেন।

আগে চিত্রনাট্য পেলে একটু বেশিই বাছবিচার করতেন কিন্তু এখন সে জায়গা থেকে সেরে আসবেন। প্রচুর সিনেমা, সিরিজ দেখেন বর্ণ। বেশি দেখেন অ্যানিমে। এই যেমন গত সপ্তাহে ঢাকায় মুক্তি পাওয়া ‘ডেমন স্লেয়ার: কিমেৎসু নো ইয়াইবা দ্য মুভি: ইনফিনিটি ক্যাসল’ দেখে ফেলেছেন। বলছিলেন, পর্দায় হয়তো অ্যানিমের মতো চরিত্র পাবেন না কিন্তু প্রকৃতি, পরিবেশসহ নানা বিষয়ে অনেক কিছুই শেখার আছে এসব কাজ থেকে।
লতিফুল হক
ঢাকা