নির্বাচন কমিশন সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর বলে সংসদকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আরো বলেন, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ইসি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ইসি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রোববার সংসদের বৈঠকে গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
একই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই দৃঢ়তার সেঙ্গ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতবিনিময় করেছে। এ ছাড়া সংবিধান, আরপিও, মতবিনিময় সভার আলোচনা, প্রচলিত বিভিন্ন আইন ও বাস্তবতার নিরিখে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সকলের অবগতির জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ, পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীদের অবাধে সংবাদ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের ফলাফল যাতে সকল ভোটার ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয় অর্থ্যাৎ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সকল কার্যক্রম সংবিধান, আইন, বিধি অনুযায়ী গ্রহণ এবং যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতীজ্ঞ।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব প্রার্থীর প্রতি সমআচরণ, নির্বাচন কমিশনের অধিক সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ, নিরপেক্ষ প্রিজাইডিং-সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, নির্বাচনি আইন ও বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে রাখা, প্রার্থী বা সমর্থক যেন নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করা, আইন ও বিধি অমান্যকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সব প্রার্থীকে আচরণবিধি অনুসারে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ তৈরিসহ সম্ভাব্য সব কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
নির্বাচনকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ উত্তরণের ইসির পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আনিসুল হক জানান, বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনি আইন অনুযায়ী অধিকাংশ জন যে সুপারিশগুলো করেছে তা বাস্তবায়ন, সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা: সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা এবং এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ; নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া; নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রাণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনে তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন যে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান; ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনী এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন এবং ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এক্সিকিউটিভ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নির্বাচনি আচরণ বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
১৬টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ ইসির
জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙার প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, নির্বাচন কমিশন প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে ১৬টি দেশে কার্যক্রম পরিচলনার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত ৩১ মে দূতাবাসে ও ১২ জুন দুবাই কনস্যুলেটে পরীক্ষামূলকভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত ৩৩৬ জন প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দেওয়া হয়েছে। ৪ হাজার ৩৫৭ জন প্রবাসী ভোটারের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়েছে এবং এক হাজার ৫৫৯ জন যোগ্য ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন ১৫টি দেশের নিবন্ধন কার্যক্রম অকার প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠেয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া গেছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদি আরব এবং ৯ অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন ও বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি দেওয়া তিনটি দেশের সঙ্গে কুয়েত, কাতার ও মালয়েশিয়ার ভোটার নিবন্ধন শুরুর প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, ওই তিন দেশের সম্মতি এখনও পাওয়া যায়নি।