সব ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু রোগী, ফাঁকা নেই মেঝেও

সরেজমিন: মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

0
147
রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছেই।

ঈদুল আজহার দিনে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে চাকরিজীবী এহসানুল হকের; সঙ্গে ছিল বমি ও শরীর ব্যথা। সময়ক্ষেপণ না করে পরের দিন পরীক্ষা করালে জানা যায় তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। পরে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।

এহসানুলের বাবা নুরুল হক জানান, তাদের বাসা মানিকনগর এলাকায়। চারপাশে ময়লার ভাগাড়। যেভাবে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে, তাই ছেলের জ্বর ওঠামাত্র পরীক্ষা করিয়েছি। একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলেজের ছাত্র শান্ত। থাকেন মান্ডা এলাকায়। ঈদের আগের দিন জ্বর আসে তাঁর। পরে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে তাঁর রক্তে ২২০০০ প্লাটিলেট। শান্ত জানান, মান্ডা এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। ডোবা-নালা আছে অনেক। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে।

মুগদা হাসপাতালের অষ্টম তলায় শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় পাঁচ বছরের টুনটুন, জোনায়েদ ও ছয় বছর বয়সী উম্মে হাবিবার অভিভাবকের সঙ্গে। তারা জানান, এই ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বেশিরভাগ আক্রান্ত শিশুর জ্বর ছেড়ে ছেড়ে আসে। শরীরে ব্যথা ও বমি হচ্ছে অনেকের। চিকিৎসকরা অনেক শিশুকে স্যালাইনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন।

শুক্রবার মুগদা হাসপাতালে দেখা যায়, রোগীর উপচে পড়া ভিড়, যাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু আক্রান্ত। বিভিন্ন ওয়ার্ড তো বটেই, সিঁড়ি-লিফটেও রোগীদের স্বজনের ভিড়ে পা রাখা দায়। প্রতিটি ওয়ার্ডেই অনেক ডেঙ্গু রোগীকে দেখা যায় মশারি ছাড়াই শুয়ে থাকতে। মশারি কেন টাঙাননি– জিজ্ঞাসা করলে সবাই গরমের অজুহাত দিয়েছেন। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে একটি এডিস মশা কামড় দিয়ে যদি ওই মশা সুস্থ কাউকে কামড় দেয়, তাহলে তারও ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা থাকে। হাসপাতালের পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, সব রোগীকে মশারি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বিশেষায়িত ওয়ার্ড, তাই মশারি টাঙাতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগীর চাপে পুরুষ, নারী ও শিশুদের আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্ধারিত শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় সব ওয়ার্ড পরিপূর্ণ। মেঝেতেও শয্যার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৩১ ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে চলতি মাসের পাঁচ দিনেই এই হাসপাতালে আট ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে  ৪৭৭ জন। ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বাড়ছে। গত জুনে এখানে ১৮০০ এর বেশি রোগী ছিল। অথচ চলতি মাসের ছয় দিনেই ছয় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।

সাজিদা ইসলাম পারুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.