সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে শীতের আগেই হচ্ছে ১০০টি ছোট হিমাগার

0
13
হিমাগার

শীতকালে সবজির মৌসুমে দেশের কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম পান না। মূলত সংরক্ষণ করতে না পারার কারণেই কয়েক বছর ধরে এমনটা ঘটছে। যেমন সর্বশেষ গত মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলেও প্রতিটি ফুলকপির দাম পাঁচ টাকায় নেমে এসেছিল। এ কারণে কৃষকদের উৎপাদন খরচও ওঠেনি। এ রকম পরিস্থিতি থেকে কৃষকদের সুরক্ষা দিতে সবজি সংরক্ষণে ১০০টি মিনি হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ১২টি হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

আজ বুধবার মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরের মেদুলিয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের হাতে হস্তান্তর করা হয় প্রথম ফারমারস মিনি কোল্ড স্টোরেজ। হিমাগার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এসব হিমাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।

■ সারা দেশে ৪২টি কৃষিপ্রধান জেলায় এসব হিমাগার হবে। ■ ৫–১৫ লাখ টাকায় তৈরি করা যায় এই হিমাগার। ■ হিমাগারগুলো সৌরবিদ্যুতে চলবে এবং মুঠোফোন দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

এই কোল্ড স্টোরেজের রয়েছে দুটি মডেল—একটি ঘরভিত্তিক (টিএসসিআর), অন্যটি কনটেইনারভিত্তিক (টিএসসিসি)। উভয় মডেলই সোলার সিস্টেম তথা সৌরবিদ্যুতে চালিত। ফলে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হবে এসব হিমাগার। এগুলোতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে বিশেষ সেন্সর, যা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই পরিচালনা করা যায়। দেশের আবহাওয়া, কৃষকের প্রয়োজন ও স্বল্প খরচের বাস্তবতা মাথায় রেখে তৈরি করা এই হিমাগারে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সবজি ও ফল তাজা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।

কৃষি কর্তকর্তারা জানান, একটি ঘরভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজে ১০ টন পণ্য রাখা যায় এবং খরচ পড়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা। কনটেইনার মডেলের হিমাগার নির্মাণে খরচ পড়ে ১৫ লাখ টাকা, যা প্রচলিত কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম। আর কৃষকেরা নিজেরাই এসব হিমাগারের দায়িত্বে থাকবেন। কৃষিনির্ভর ৪২টি জেলায় প্রাথমিকভাবে এই হিমাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব হিমাগারে ৮-১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সবজি সংরক্ষণ করা যাবে।

সভায় কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘শীত মৌসুমে দেশে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হয়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সবজি পচে যায়। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের ক্ষতি কমাবে। মানিকগঞ্জে গাজরসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি বেশি উৎপাদন হয়। এ ব্যবস্থায় কৃষক ও ভোক্তা সরাসরি উপকৃত হবেন। মিনি কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা পর আরও বাড়ানো হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে শীতের আগেই এসব হিমাগার নির্মাণ করা হবে। প্রয়োজনে কৃষকেরা নিজেরাও বাড়িতে অল্প খরচে এসব তৈরি করতে পারবেন। আমরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তা দেব।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন সময় এসেছে সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করার। উন্নত দেশে কৃষক পর্যায়ে ছোট কোল্ড স্টোরেজ বহুল ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে এ প্রকল্পই প্রথম। সোলারভিত্তিক ও অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির মিনি হিমাগার আমাদের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।’

হিমাগার নির্মাণ প্রকল্পটির পরিচালক তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, ‘টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, লাউ, আম, ড্রাগন ফলসহ নানা ফসল এসব হিমাগারে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে আমরা এ প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারণ করতে চাই, যাতে কৃষকের আয় বাড়ে, ফসলের অপচয় কমে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।’

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাসহ তিন শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.