সফল সংসারের রহস্য জানালেন শাবনাজ–নাঈম

0
166
শাবনাজ–নাঈম একসঙ্গে কাটিয়ে দিলেন প্রায় তিন দশক ছবি : সংগৃহীত

‘ক্যারিয়ার শেষ’, ‘টিনএজ ছেলে–মেয়ে, এই বিয়ে বেশি দিন টিকবে না’, ‘কত তারকার বিয়ে ভাঙল’, ‘নাঈমের অনেক দোষ, শাবনাজের এই-সেই…,’ ক্যারিয়ারের চুড়ায় থাকা অবস্থায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এমন কথাই শুনতে হয়েছে জনপ্রিয় তারকা জুটি শাবনাজ–নাঈমকে। কিন্তু নটেগাছটি মুড়োলেও তাঁদের গল্প ফুরোয়নি। হাতে হাত রেখে একসঙ্গেই এখনো আনন্দে জীবন কাটাচ্ছেন এই দুই রুপালি তারা।

১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন শাবনাজ–নাঈম ছবি : সংগৃহীত

কিছুটা বিরতি দিয়ে দিয়ে কথা বলেন বলে শাবনাজের মুখের ভাষায় এক ধরনের ছন্দ খেলা করে। লেডিজ ফার্ষ্ট, তাই শাবনাজের মুখেই আগে শুনি বিয়ের পরের দিনগুলোর কথা। ‘তরুণ বয়সে বিয়ে হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল, হুট করে বিয়ে করেছি। এই বিয়ে বেশি দিন টিকবে না, বিচ্ছেদ হবে। কিছু সহকর্মী নাঈমকে নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক কথা বলার চেষ্টা করত। আমি শুনতাম আর মানুষগুলোকে চিনে রাখতাম। অনেক সময় নিজের মতো করে জবাব দিতাম।

বিয়ের অনুষ্ঠানে শাবনাজ

বিয়ের অনুষ্ঠানে শাবনাজ।  ছবি : সংগৃহীত 

পরিচিত মানুষেরা স্বামীকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বললে কী মনে হতো? শাবনাজ বলেন, ‘এসব মানুষের কথায় কোনো গুরুত্ব দিইনি। বলতাম, “আমার স্বামী কেমন, সেটা আমি জানি। এগুলো নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।” এরপর হয়তো ঘটনাগুলো ফোনে নাঈমকে বলতাম। কখনো বাসায় গিয়ে ওর সঙ্গে আলোচনা করতাম। শুরু থেকেই চাইতাম, আমাদের মধ্যে কোনো কিছু গোপন না থাকুক। হুট করে আমরা স্বামী–স্ত্রী হইনি। আগে আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছে, পরে প্রেমিক–প্রেমিকা। তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই উসকানি দিয়ে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানো সহজ ছিল না।’

পথ বন্ধুর ছিল বলেই বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে

পথ বন্ধুর ছিল বলেই বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।  ছবি : সংগৃহীত

অনেকটা শখের বশেই সিনেমায় এসেছিলেন শাবনাজ ও নাঈম। ঠিক করেছিলেন, প্রথম ছবি যদি ব্যবসাসফল হয়, তাহলে সিনেমায় নিয়মিত হবেন। চাঁদনী ব্যবসাসফল হলো। আলোচনায় এলেন নাঈম আর শাবনাজ। শুধু সিনেমার জুটি হিসেবেই না, ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার জায়গাটাও পাকাপোক্ত হতে থাকল।

নাঈমের বাবা শাবনাজকে খুব পছন্দ করতেন

নাঈমের বাবা শাবনাজকে খুব পছন্দ করতেন। ছবি : সংগৃহীত 

নাঈমের বাবা ছিলেন খুবই মিশুক আর সাদা মনের একজন মানুষ। অভিনয়ে আসার আগে থেকেই শাবনাজকে চিনতেন। একদিন শাবনাজদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে বললেন, ‘আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে জানাবেন। আমার ছেলের জন্য শাবনাজকে আমার খুবই পছন্দ।’

বিয়ে করবেন, এমন ভাবনা তখনো নাঈম- শাবনাজের ছিল না। বিষের বাঁশি চলচ্চিত্রে কাজ করার সময় প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ১৯৯৪ সালে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেন। ২৯ বছরে পৌঁছে গেছে সেই সংসার। এই দীর্ঘ সময় পার করে এসে এই দম্পত্তিকে যে কথাটা এখন সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়, সেটা হলো, ‘সফল সংসারের রহস্য কী?’ নাঈমের কাছ থেকে ফোনটা আবার নিজের কাছে নিলেন শাবনাজ, ‘একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার আগে দরকার কম্প্রোমাইজ করতে শেখা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা–সম্মানটাও জরুরি। সব সময় সবকিছু নিয়ে সুখী হওয়া কঠিন। সবকিছু চাই, এটা লাগবে, সেটা লাগবে—এমন মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কী কী বাদ দিলেও জীবন চলতে পারে, সেটা দুজনকেই শিখতে হবে। নারীরা স্বামীকে সম্মান দিতে জানেন। কিন্তু অনেক পুরুষই সেটা হয়তো সেভাবে জানেন না। নাঈমকে সব সময় দেখেছি, স্ত্রী হিসেবে আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে।’

শাবনাজ–নাঈম এখন

শাবনাজ–নাঈম এখন। ছবি : সংগৃহীত

পাশ থেকে নাঈম যোগ করেন, ‘আনকন্ডিশনাল লাভ হতে হবে। যেখানে কোনো শর্ত থাকবে না, কোনো স্বার্থ থাকবে না। যাকে ভালোবাসি, তার ভুলকেও ভালোবাসতে হবে, ভালোকেও ভালোবাসতে হবে। কোনো দাড়িপাল্লা দিয়ে মাপা যাবে না, কে বেশি ত্যাগ স্বীকার করছে। তবে একতরফা একজনই সব সময় ত্যাগ করবে, সেটাও হবে না। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করলেই ভালোবাসা টিকে থাকবে, সংসারজীবন সুন্দর হবে। সম্পর্কে গিভ অ্যান্ড টেক থাকলে তাকে ভালোবাসা বলা যায় না। এটা কেন করেছ, ওখানে কেন গেলে, এমন প্রশ্ন সম্পর্কে নষ্ট করে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে

বিয়ের অনুষ্ঠানে ।ছবি : সংগৃহীত

সংসারজীবনের শুরু থেকেই একসঙ্গে জীবনটাকে যাপন করতে চেয়েছেন এই জুটি। এর মূলে ছিল শান্তি। তাঁদের উভয়ের কথা, শান্তি না থাকলে দিন শেষে সবই ব্যর্থ মনে হয়। এই শান্তিই ছিল তাঁদের ছোট্ট চাওয়া। সেই চাওয়াই বসন্তের পর বসন্ত তাঁদের সম্পর্ককে টিকিয়ে রেখেছে। ঝড়ঝাপটা এসেছে, দুজন মিলে সেসব মোকাবিলা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, পথ বন্ধুর ছিল বলেই বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে। নাঈম বলেন, ‘একটা সময় আমরা দুজন ছিলাম। এখন আমাদের দুটো মেয়ে আছে। এখন আমি যদি আমার স্ত্রীকে সম্মান না করি, তাহলে আমার সন্তানেরা কী শিখবে? আমরা নিজেদের সম্মান না দিলে সন্তানেরা কেন সম্মান দেবে।’

বর বেশে নাঈম

বর বেশে নাঈম ।ছবি : সংগৃহীত

ভুলেও ভাববেন না তারকা দম্পত্তি বলে তাঁদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। ২৯ বছরের সংসারে একেকটা বয়সে একেক রকম করে কেটেছে। অনেকবার রাগারাগি, মান–অভিমান হয়েছে কিন্তু ঘরের কথা পরে জানেনি। তাঁরা মনে করেন, সংসারজীবনে রাগারাগি হবেই, এটাই সংসারের সৌন্দর্য। শাবনাজ জানালেন, তিনি একটু বেশি অভিমানী। সহজেই রাগ হয়, ‘মেয়েদের রাগ তো বোঝেনই। মেয়ে হিসেবে আমারই বেশি রাগ হয়। মাঝেমধ্যে রেগে চুপচাপ বসে থাকি। কোনো কথা বলি না। দেখা যায়, অনেক সময় আমারই দোষ থাকে। তারপরও রেগে বসে আছি। মেয়েরাও তখন বাপের হয়ে আমার দোষগুলো ধরিয়ে দেয়। আমিও তখন বাধ্য হয়ে “সরি” বলি। আমি রাগ করলেও নাঈম আগে এসে কথা বলে। নাঈম চায় না, বাসার ভেতর কোনো রাগারাগি থাকুক। নাঈম বারবার “সরি” বলে রাগ ভাঙায়। আর আমার প্রতিবারের মান-অভিমানের দৈর্ঘ্য বড় জোর ৩০ মিনিট।’

সংসার জীবনে ঝড়ঝাপটা এলে দুজন মিলে সেসব মোকাবিলা করেন।

সংসার জীবনে ঝড়ঝাপটা এলে দুজন মিলে সেসব মোকাবিলা করেন।ছবি : সংগৃহীত

পাশ থেকে নাঈমের কথা ভেসে আসছিল। ফোনটা আবার তাঁকে দিলেন শাবনাজ। নাঈম বললেন, ‘রাগ–অভিমানকে আমরা জীবনে প্রশ্রয় দিই না। এমন অনেক রাত গেছে, যখন আমরা না ঘুমিয়ে একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছি। সেসব কথা ভাবি। আমরা ভাবি, জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। একটা জীবন ভালোবাসার জন্য খুব বেশি সময় কি? প্রতিটা মুহূর্তে জীবনটাকে উদ্‌যাপন করছি।’

ফোনো আড্ডার ফাঁকেই জানা গেল, এখন টাঙ্গাইলে আছেন এই দম্পতি। নাঈমদের জমিদারবাড়ি এখন আত্মীয়স্বজনে ভরপুর। সবার সঙ্গে দেখা করতেই তাই ছুটে আসা। মেয়েরা গ্রামে এসে শীতের পিঠা খেতে পেয়ে দারুণ খুশি। নাঈম বলেন, ‘এসবের মধ্যেই একসঙ্গে বেঁচে থাকার অনেক কিছু রয়েছে। শুধু খুঁজে নিতে হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.