খুলনায় মধ্যরাতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ-নৌবাহিনীর সদস্যসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ৭০ থেকে ৮০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এ সময় খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ তার বাহিনীর ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার (৩০ মার্চ) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার।
অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পলাশ শেখ (৩৮), নুরে আলম সিদ্দিকী লিমন শরীফ (২৯), রুবেল ইসলাম লাভলু কালা লাভলু (৩৫), ইমরান হোসেন ট্যাটু ইমরান (৩৫), সৈকত রহমান (২৭), ফজলে রাব্বি রাজন (৩৬), রিপন (৩০), গোলাম রব্বানী (২৬), ইমরানুজ্জামান (৩৩) ও শহিদুল (৩৫)।
এর আগে, শনিবার রাতভর খুলনা মহানগরীর আরামবাগ এলাকার একটি বাড়িতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলি হয়।
কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ৭ পুলিশ এবং ১ জন নৌবাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ তার বাহিনীর ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তিনটি পিস্তল, পিস্তলের চার রাউন্ড গুলি, ১টি শটগান, শটগানের ২৩ রাউন্ড গুলি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি, ১টি হাঁসুয়া, ২টি চাকু, ৪টা মোবাইল ফোন এবং ৭টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেএমপি কমিশনার বলেন, নগরীর বানরগাতি আরামবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করেন। সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে ভবনের ছাদ থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশ নিজেদের আত্মরক্ষার্থে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে পাল্টা শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ছাদ থেকে নেমে বিল্ডিংয়ের নিচে এসে পুনরায় গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও পাল্টা শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় নৌবাহিনীর সদস্যদের সংবাদ দিলে তারাও ঘটনাস্থলে আসে।
কেএমপি কমিশনার বলেন, যৌথবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির মধ্যেই চারিদিক থেকে বিল্ডিংটি ঘিরে ফেলা হয় এবং বিল্ডিংয়ের ভিতর থেকে দেশীয় অস্ত্র, বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা অন্যান্য সন্ত্রাসীরা বিল্ডিং থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে। সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে আরও পাঁচ সন্ত্রাসীকে দেশীয় অস্ত্র, বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক করা হয়। থানার রেকর্ডপত্র যাচাই করে জানা যায়, সন্ত্রাসী পলাশের বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৪টি মামলা আছে। আসামি রুবেল ইসলাম লাভলু ওরফে কালা লাভলুর বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ৬টি মামলা রয়েছে। আসামি নুরে আলম সিদ্দিকী ওরফে লিয়ন শরীফের বিরুদ্ধে দুটি, মো. ইমরান হোসেন ওরফে ট্যাটু ইমরানের বিরুদ্ধে একটি, ফজলে রাব্বি রাজনের বিরুদ্ধে একটি, মো. রিপনের বিরুদ্ধে একটি, মো. ইমরানুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে।
কেএমপি কমিশনার আরও বলেন, নিজেদের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে শটগানের ৪৭ রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। এ সময় সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ৭টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৫টির নম্বর প্লেট আছে এবং দুটির নম্বর প্লেট বিহীন। ঘটনার সময় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় আসামিরা শারীরিকভাবে আহত হওয়ায় তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ, খুলনা নৌবাহিনীর স্টাফ অফিসার অপারেশন লে. কমান্ডার মো. সামিউর রহমান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) মোহা. আহসান হাবীব, সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আজম খান ও সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম।