সচিব, ডিসি ও ইউএনওসহ প্রশাসনের সব স্তরে নারীর অবস্থান শক্ত হচ্ছে

0
161
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী আছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ নারী। প্রথম শ্রেণিতে (এখন গ্রেড ভিত্তিতে চাকরি নির্ধারণ হলেও মুখে মুখে শ্রেণি বলা হয়) মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে নারী ৩৯ হাজার ৭৮৭ জন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট ৭৯ সচিব আছেন। এর মধ্যে নারী সচিব ১০ জন। অর্থ, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো নারীরা সামলাচ্ছেন। এখন অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। তিনি দেশের প্রথম নারী অর্থসচিব। এ ছাড়া অন্য সচিবদের মধ্যে আছেন—অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) নাসিমা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সচিব হামিদা বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব নাহিদ রশীদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন। এ ছাড়া রয়েছেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ।

অবশ্য সচিব পদে নারীর সংখ্যাটি বেশ কয়েক বছর ধরেই দশের ঘরেই আটকে আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩২৭ অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৫৫ জন নারী, ৮৫৮ যুগ্ম সচিবের মধ্যে ১৬৪ নারী, ১ হাজার ৭০৪ উপসচিবের মধ্যে ৩৭০ নারী, ১ হাজার ৮৬৭ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনারের মধ্যে নারী ৬৮৯ জন। এ ছাড়া ১ হাজার ৪৪২ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৪৩৩ জন।

মাঠ প্রশাসন সামলাচ্ছেন নারীরা

বর্তমানে ৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে ১০ জন নারী। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার তিনটিতেই নারীরা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা হলেন নেত্রকোনায় অঞ্জনা খান মজলিশ, শেরপুরে সালেহা আক্তার ও জামালপুরে শ্রাবস্তী রায়। এঁদের মধ্যে অঞ্জনা খান নেত্রকোনার আগে চাঁদপুরেও ডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন।

অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে অঞ্জনা খান বলেন, প্রথমেই একজন নারীকে প্রমাণ করতে হয়, তিনি এ পদের যোগ্য কি না। তবে ধীরে ধীরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও পরিবর্তন হবে। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী হিসেবে তিনি বড় কোনো অসুবিধায় পড়েননি বলে উল্লেখ করেন।

অন্য নারী ডিসিরা হলেন মাদারীপুরে রহিমা খাতুন, মুন্সিগঞ্জে কাজী নাহিদ রসুল, হবিগঞ্জে ইশরাত জাহান, রংপুরে চিত্রলেখা নাজনীন, ঝিনাইদহে মনিরা বেগম, ঝালকাঠিতে ফারাহ্ গুল নিঝুম ও বান্দরবানে ইয়াছমিন পারভীন।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন মুঠোফোনে  বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে তিনিই প্রথম নারী ডিসি হিসেবে কাজ করছেন। সমতলের জেলাগুলো থেকে পার্বত্য এলাকার  সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। তবে এখন নারীরা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। দুই বছরের দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত তিনি বড় কোনো সমস্যায় পড়েননি।

ইয়াছমিন বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নারী ডিসিদের কাছে মানুষ সহজেই আসতে পারেন। বিশেষ করে অনেক সমস্যা নারীকেন্দ্রিক হওয়ায় তাঁরা খুব সহজেই তাঁকে বলতে পারেন। ডিসিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখার তথ্যমতে, এখন সারা দেশে ৪৮০ ইউএনওর মধ্যে ১৬৪ জন নারী। দায়িত্বরত ইউএনওদের মধ্যে এই হার ৩৪ শতাংশ। উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁরাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া  সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত দপ্তর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছেন ১৩৩ নারী।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন  বলেন, বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর কর্মপরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় আজ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নারীরা নেতৃত্বে আছেন। এটি এক দিনে হয়নি। ধীরে ধীরে হয়েছে। তাঁরাও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি আশা করেন, আগামী পাঁচ বছরে প্রশাসনে নারীর অবস্থান আরও উচ্চমাত্রায় যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.