আগাম জামিন চেয়ে আবদুল হাইয়ের আবেদন আদালতে জমা পড়েনি

0
109
আবদুল হাই বাচ্চু

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৮ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে আবেদনগুলো এখনো হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

আবদুল হাই বাচ্চু আগাম জামিন চেয়ে গতকাল বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক আবেদন করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী।

বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করে অভিযোগপত্র অনুমোদন করা হয়েছে বলে গত ১২ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানায়। সেদিন এক ব্রিফিংয়ে দুদক জানায়, ৫৯টি মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ আবদুল হাইকে ৫৮টিতে আসামি করা হয়েছে। শেখ আবদুল হাইসহ বেসিক ব্যাংকের ৪৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ১০১ জন গ্রাহককে এসব মামলায় আসামি করা হয়। শিগগিরই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।

আজ রাত আটটার দিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ৫৮টি মামলায় আবদুল হাই বাচ্চু আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন। হাইকোর্টের যেসব বেঞ্চে আগাম জামিন আবেদনের শুনানি হয়—সেসব বেঞ্চে খোঁজ নিয়েছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব আবেদন আদালতে জমা হয়নি। আগামী রোববারের কার্যতালিকায় যা থাকবে, অনলাইনে আজ রাতে তা হালনাগাদ হবে। তখন আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে, তিনি আদালতে আবেদন জমা দিয়েছেন কি না।

আবদুল হাই বাচ্চুর করা জামিন আবেদনে ফাইলিং ল’ইয়ার হিসেবে আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেনের নাম উল্লেখ রয়েছে। রাত সোয়া আটটার দিকে তিনি বলেন, ৫৮টি মামলায় আবদুল হাই বাচ্চুর আগাম জামিন চেয়ে পৃথক আবেদন করা হয়েছে। তবে হাইকোর্টের কোন বেঞ্চে এবং কবে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে—এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সরকারি খাতের ভালো ব্যাংক হিসেবে একসময় পরিচিত ছিল বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংকে লুটপাট শুরু হয় আবদুল হাই চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকটির ঋণ কেলেঙ্কারি ও অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে। তবে মামলায় আবদুল হাইকে আসামি করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়ে। ফলে ২০১৪ সালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়। সে বছরের ২৯ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছুদিন পর ৪ জুলাই শেখ আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগপত্র জমা দেন।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংকের ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর দায়িত্বকালটা ‘অস্বস্তির’ ছিল। অনিয়মের অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে অনুসন্ধানে নামে দুদক। পরে  ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে সংস্থাটি। পরে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও তিনটি মামলা যোগ হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে।

আবদুল হাই ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দেয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.