সংবিধান বাতিল ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি চার বছর মেয়াদি বিপ্লবী সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক নাগরিক সমাবেশে সংগঠনটির রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান এই আহ্বান জানান। এই সময় বিপ্লবের রূপরেখা পেশ করেন তিনি।
বিপ্লবের রূপরেখা তুলে ধরে আনিছুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি চার বছর মেয়াদি বিপ্লবী সরকার গঠন করা হোক। এই সরকার হবে রাষ্ট্রপতি শাসিত। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করবেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ করবেন এবং ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নতুন রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান বাতিল ঘোষণা করবেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতির ফরমান বলে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে।
তিনি বলেন, বিপ্লবী সরকারের সর্বপ্রথম কাজ হবে জুলাই গণহত্যা, পিলখানা ও শাপলা চত্বর ম্যাসাকার, গুম, খুনসহ মানবাধিকার হরণের সকল অপরাধে জড়িতদের সরকার ও দলগতভাবে সুপ্রিম কমান্ড রেস্পন্সিবিলিটিসহ বিচার করা।
তিনি আরও বলেন, বিপ্লবী সরকারের দ্বিতীয় প্রধান কর্তব্য হবে ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট গণবিরোধী সংবিধানের পরিবর্তে নতুন জনগণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করা। এজন্য সরকারকে আগামী জুনের মধ্যে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। গণপরিষদের সদস্যরা সর্বস্তরের গণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন জনগণতান্ত্রিক সংবিধানের প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করবেন এবং এ নিয়ে জনগণকে তর্ক-বিতর্ক ও আপত্তি জানাতে অন্তত তিন মাস সময় প্রদান করবেন। এরপর জনগণের উত্থাপিত মতামতের আলোকে এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে অন্তত দুই মাস আলোচনা ও পর্যালোচনা করার সময় দেবেন। এরপর ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান চূড়ান্ত করবে।
সমাবেশে বিপ্লবের রূপরেখা তুলে ধরে সংগঠনটির রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান আরও বলেন, বিপ্লবী সরকারের সময়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, আইন-শৃঙ্খলা, বাজার ও অর্থ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ফ্যাসিস্ট নিপীড়ক ও অন্য দুর্বৃত্তদের বিচার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সশস্র বাহিনী, আদালত, জনপ্রশাসন, পুলিশ, কর্পোরেট সিইও, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক ও অনাবাসী নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সেনাপ্রধান মনোনীত করবেন।
এ ছাড়াও ফ্যাসিবাদবিলোপে জন্য গণতান্ত্রিক সংগ্রাম গড়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতার প্রতি জোর দেওয়া হয় এই বিপ্লবের রূপরেখা।
ফ্যাসিবাদ বিলোপ ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিতে সংগঠনটির আয়োজনে এই নাগরিক সমাবেশে শহীদের পরিবার ও আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ উদ্বোধন করেন আশুলিয়ার শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের মা। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চব্বিশে শহীদ সায়েম হোসেনের মা শিউলি আক্তার, শহীদ আবুল হোসেনের বড় ভাই আবুল বাশার অনিক, শহীদ মো. রনির বাবা মো. হারুনসহ প্রায় ১৫ জন শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের অনেকে। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে গণহত্যার শিকার শহীদ মধু মিয়ার বাবা সমাবেশে সন্তানের শহীদ হওয়ার স্মৃতি তুলে ধরেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ঢাবির সাবেক ছাত্র মো. সেলিম। জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রোটারিয়ান রাবেয়া আক্তার।