শ্রদ্ধার পুষ্পে ভাষাশহীদদের স্মরণে জাতি

0
110
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

‘সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা স্লোগান দিচ্ছেন ‘রাষ্ট্রভাষা! রাষ্ট্রভাষা!, বাংলা চাই! বাংলা চাই!’ লাল সবুজ ফুল আর কালো রঙের আবহে যে কারও মনে হতে পারে, বায়ান্ন’র রক্তমাখা মিছিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনি যেন প্রত্যক্ষ করছেন সেদিনের সেই দৃশ্য। মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষাশহীদদের স্মরণ করছে জাতি।

একুশের প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ব্যক্তিগতভাবে এবং দলবদ্ধ হয়ে একের পর এক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

দিনটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে আঁকা হয়েছে আলপনা। আশপাশের রাস্তা ও দেয়ালে নতুন রং করা হয়েছে। লেখা হয়েছে ভাষা আন্দোলন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত কবিতার বিশেষ পঙ্‌ক্তি, মনীষী-ভাষাবিদদের বাণী। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের গ্রাফিতি।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের নেতারা দলের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু শ্রদ্ধা জানান।

তাদের পর ফুল দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল।

এরপর চৌদ্দ দলের পক্ষ থেকে হাসানুল হক ইনু, অসীম কুমার উকিল ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, চিফ হুইপের পক্ষ থেকে হুইপ মো. ইকবালুর রহিম, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান, বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা শ্রদ্ধা জানান। এরপর কূটনীতিক, হাইকমিশনারবৃন্দ, রাষ্ট্রদূত, বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান।

এরপর র‍্যাবের প্রধান এম খুরশীদ হোসেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা শ্রদ্ধা জানান।

পুলিশের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, কারা অধিদপ্তর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সরকারি কর্মকমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিতে উদ্ধত হয়। কিন্তু বীর বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে রাজপথ। প্রতিষ্ঠা করে মায়ের ভাষা। সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা যখন অন্যায়ভাবে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপরে চাপিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন বাঙালি ফুঁসে উঠেছিল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করে এগিয়ে যেতে থাকলে তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। এরপর থেকেই জাতি শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে মহান শহীদ দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.