সংকট সমাধানের আহ্বান জানাতে মধ্যপ্রাচ্যে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0
156
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওকো কামিকাওয়া।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে মানবিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা থেকে ইসরায়েলকে বিরত রাখার চেষ্টায় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওকো কামিকাওয়া এখন পাঁচ দিনের সফরে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর সঙ্গে গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। গাজা ভূখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামিকাওয়া গাজা ভূখণ্ডের শোকার্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক শোক প্রকাশ করেছেন। গাজার জনগণের জন্য জাপানের মানবিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জবাবে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরায়েলি হামলায় চরম মানবিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, পশ্চিম তীরেও উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য ইসরায়েলে হামাস ও অন্যদের চালানো হামলার কঠোর নিন্দা জানান। তিনি উল্লেখ করেন, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া ও সেই সঙ্গে বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব পক্ষের প্রতি আবেদন জানিয়ে আসছে জাপান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গাজা ভূখণ্ডের প্রতিটি মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠায় সাড়ে ছয় কোটি ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত মানবিক সাহায্য প্রদানে জাপান প্রস্তুত আছে। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে জাপানের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকার বার্তাও ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন।

এর আগে একই দিন সকালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেল আবিবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ইসরায়েলে হামাসের চালানো সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নারী, শিশুসহ বেসামরিক লোকজনের দুর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় ‘মানবিক বিরতি’ অবলম্বনের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি ওই অঞ্চলে অবস্থানরত জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।

জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপানিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সব রকম চেষ্টা ইসরায়েল নেতৃত্ব করে যাবে। তবে ‘মানবিক বিরতি’ অবলম্বন নিয়ে মন্তব্য করা থেকে তিনি বিরত ছিলেন।

গাজার পরিস্থিতি জাপানকে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান জাপান শুরু থেকে সমর্থন করে আসছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে জাপান ভারসাম্যমূলক অবস্থান এ কারণে ধরে রাখতে চাইছে যে জাপানের জ্বালানি সরবরাহের সিংহভাগ সেই অঞ্চল থেকে আসে। অনেকটা এ কারণেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রশ্নে জাপান সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমের দেশগুলোর একই বলয়ে অবস্থান করা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে নিজস্ব কিছুটা ভিন্ন অবস্থান টোকিওকে গ্রহণ করতে দেখা যায়। এ কারণেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গাজা ভূখণ্ডসংক্রান্ত প্রস্তাবে পশ্চিমা জোটের প্রভাবমুক্ত থেকে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানোর প্রস্তাবের পক্ষে জাপান ভোট দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্কেও জাপানকে একই অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের বিরক্তি এড়িয়ে যেতে কঠোর ভাষায় হামাসের সমালোচনাও করতে হচ্ছে জাপানকে।

পাঁচ দিনের সফর শেষ করার আগে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.