প্রায় সোয়া ৩ ঘণ্টার বিমানযাত্রা, গন্তব্য শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো হয়ে ক্যান্ডি। এশিয়া কাপ খেলতে বাংলাদেশ দল কাল সন্ধ্যায়ই পৌঁছে গেছে সেখানে। তবে অন্য একটা দেশে যাওয়ার যে রোমাঞ্চ, সেটি কি থাকল দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে!
এশিয়া কাপের ১৭ সদস্যের বাংলাদেশ দলে এমন ৮ জন ক্রিকেটার আছেন, কলম্বো-ক্যান্ডিকে যাঁদের মনে হতে পারে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেটের মতো নিকট অতীতে দেখা কোনো শহর। এই আট ক্রিকেটারই গত দুই মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, শরীফুল ইসলাম ও তাওহিদ হৃদয় মাত্রই এলপিএল খেলে এসেছেন। তার আগে শ্রীলঙ্কাতেই হয়েছে ইমার্জিং কাপ; যেখানে খেলেছেন বাংলাদেশ দলের আরও চার ক্রিকেটার মেহেদী হাসান, তানজিম হাসান, তানজিদ হাসান ও মোহাম্মদ নাঈম।
শ্রীলঙ্কায় অতি সম্প্রতি খেলে আসার এই অভিজ্ঞতা ৩১ আগস্টের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিশ্চয়ই বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে ক্রিকেটারদের। পরের রাউন্ডে গেলে তো আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ আসবে সেখানে। বাংলাদেশ দলের জন্য যে এটা একটা বাড়তি সুবিধা, সেটি পরশু মিরপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কাল একই কথা বললেন অন্যরাও।
সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের সামনে পাওয়া গেল তাওহিদ হৃদয়, মোহাম্মদ নাঈম ও হাসান মাহমুদকে। দলের অনেকে বিসিবির মিনিবাসে বিমানবন্দরে গেলেও তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন শামীম হোসেনের জন্য। শামীমের গাড়িতে একসঙ্গে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে হৃদয় আর নাঈমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হচ্ছিল তাঁদের সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কা-অভিজ্ঞতা নিয়ে।
শ্রীলঙ্কায় খুবই ভালো সময় কেটেছে হৃদয়ের। এলপিএলে ৬ ম্যাচে ৬ ইনিংস খেলে ১৫৫ রান করেছেন ৩৮.৭৫ গড়ে, স্ট্রাইক রেটও (১৩৫.৯৫) খারাপ নয়। তবে বছরের এই সময়টায় শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টি হয় বলে তিনিও হয়তো সেখানকার কন্ডিশনে ব্যাট হাতে খুব আক্রমণাত্মক হতে চাইবেন না। ওয়ানডেতে যার স্ট্রাইক রেট ৯৭.৬৮, সেই হৃদয়ই বলেছেন, ‘ক্রিজে গিয়েই মারা যাবে না। বুঝেশুনে মারতে হবে। উইকেট সে সুযোগ দেবে না। ধরে খেলতে হবে। সেট হলে হয়তো আপনি দুই-একটা বড় শট চালিয়ে দিতে পারবেন, কিন্তু শুরুতেই নয়।’
বাংলাদেশের সাদা বলের ক্রিকেটটা এখন আর আগের মতো নেই। বিশ্বকাপের আগে ভালো উইকেটে খেলার চর্চা বাড়াতে ঘরের মাঠের সর্বশেষ সাদা বলের সিরিজগুলো হয়েছে স্পোর্টিং উইকেটে, যেখানে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই ছিল দলের চাহিদা। কিন্তু মেহেদীও বলছেন, কন্ডিশনের কারণেই হয়তো এশিয়া কাপে একটু মানিয়ে খেলতে হবে, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট নরম হবে, বল ঘুরবে। ইমার্জিংয়ে কলম্বোর উইকেট এমনই ছিল। শট বাছাই ঠিক হতে হবে।’
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় খেলে আসাদের মধ্যে পেসারদের প্রতিনিধি শরীফুল। এলপিএলে খেলার সুবাদে শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন কিছুটা বোঝা হয়ে গেছে তাঁরও, ‘এলপিএল খেলতে শ্রীলঙ্কা যাওয়ায় ভালো হয়েছে। বছরের এই সময় সেখানে কন্ডিশন কেমন হতে পারে, সে ধারণা পেয়েছি। আশা করি এই অভিজ্ঞতা এশিয়া কাপে কাজে লাগবে।’
ইমার্জিং এশিয়া কাপে ৩ ম্যাচে ৯ উইকেট নেওয়া তানজিমের শ্রীলঙ্কা-ভাবনাও প্রায় একই রকম, ‘টেস্ট ভেন্যুগুলো একটু ভালো। কিন্তু বাকিগুলোর উইকেট মন্থর।’ এশিয়া কাপে ম্যাচ হবে দিবারাত্রির। সেটাও পার্থক্য গড়ে দেবে বলে ধারণা তানজিমের, ‘দিনে ও রাতে উইকেট ভিন্ন রকম আচরণ করবে। দ্বিতীয় ইনিংসে তো বল গ্রিপ করবেই। তখন পেসারদের কাটার, স্লোয়ার বল কার্যকরী হবে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ পাকিস্তানের লাহোরে। বড় রান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি সেখানে। তবে দেশের বাইরে ভালো উইকেটেও রেকর্ড ভালো বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের। ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে তাঁর বোলিং গড় ৩৬, দেশের বাইরে সেটাই কমে আসে ১৪.৮০ তে।
পরিসংখ্যানটা নাসুমের মনে থাকার কথা নয়, তবে ব্যাটিং উইকেটে নিজের বোলিং নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি, ‘ভালো ব্যাটিং উইকেটে আমি ভালো করি। বল স্কিড করলে বরং আমার সুবিধা। নতুন বলে তখন নিজেকে বেশি কার্যকর মনে হয়। ভালো উইকেট হলে আমারই ভালো।’
এর আগে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান কোথাওই খেলেননি নাসুম। দুই দেশের কন্ডিশনই তাই তাঁর জন্য একই রকম—অজানা। এ রকম পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাকাটাই একমাত্র পথ। ওয়ানডেতে যেকোনো দলকে ভয় ধরাতে পারা বাংলাদেশ অবশ্য এখন ৫০ ওভারের সব ম্যাচই খেলে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে। সর্বশেষ ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপের মতো এবারও তাই চোখে ফাইনালের স্বপ্ন। কাল দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে সেই স্বপ্ন দেখালেন তাসকিন আহমেদও।