মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যুবদল নেতা তরিকুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
তরিকুল ইসলাম শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। মারামারির একটি মামলার আসামি হিসেবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে রাতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁকে থানাহাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যে বাধা দেওয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগে শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। তাঁর কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। একই সঙ্গে যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাঁর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতিমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলামের বহিষ্কারাদেশ আমরা পেয়েছি। আদেশ মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ ও থানা সূত্রে জানা যায়, মারামারির ঘটনায় গত ১৯ নভেম্বর শ্রীনগর থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন তরিকুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানাহাজতে রাখে। তখন তরিকুলকে ছাড়িয়ে নিতে প্রথমে থানায় আসেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা তরিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন। পুলিশ রাজি না হলে হাফিজুল ইসলাম খান সন্ধ্যা সাতটার দিকে অন্য নেতা-কর্মীদের থানায় রেখে বেরিয়ে যান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, সেদিন রাতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী থানা প্রাঙ্গণে জড়ো হন। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে জোর করে ওসি ও সার্কেল এসপির সামনে থেকে আসামি তরিকুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।
থানাহাজত থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আজ বেলা দেড়টার দিকে শ্রীনগর থানায় মামলা হয়েছে। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও ২০১ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করেন থানার উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক।
ওসি প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার ৩
এদিকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় তাঁকে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
অন্যদিকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন উপজেলার মত্তগ্রামের সিয়াম পাঠান (২৭), শুভ পাঠান (২৮) ও শ্যামসিদ্দি এলাকার হিমেল (৩০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার বলেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। তিনি বলেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওসির দায়িত্বে অবহেলা ছিল। তাই তাঁকে থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।