শ্রমিকদের দেড় ঘণ্টার অবরোধে ‘অচল’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

0
79
চান্দিনার বেলাশহর এলাকা থেকে তোলা।

শ্রমিকদের বেতন ও বোনাসের দাবিতে আজ শুক্রবার মাত্র দেড় ঘণ্টা অবরোধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা সড়কের কিছু অংশ। এতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেও মহাসড়কে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার যানবাহন। যানজট ক্রমেই বাড়ছে। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। এতে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বেতন-বোনাসের দাবিতে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা রাস্তায় বসে পড়ে গাড়ি আটকে বেতনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে প্রশাসন থেকে তাদের আজকের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেন তারা। কিন্তু মাত্র দেড় ঘণ্টায় মহাসড়কে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। শ্রমিকদের অবরোধের ফলে মহাসড়কের ময়নামতি থেকে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট দীর্ঘ হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের উভয় লেনে হাজার হাজার যানবাহন আটকে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ। অবরোধস্থলে রাস্তায় বসে পড়েছে নারী শ্রমিকরা। খুব বেশি বেকায়দায় পড়েছে রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স, বিদেশগামী যাত্রী ও হাটের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া গরুবাহী ট্রাকচালকরা।

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, দুপুর ২টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু যানজটে আটকে পড়ে এখনো চান্দিনায় আছি। কখন পৌঁছতে পারব কিছুই বুঝতেছি না।

বগুড়া থেকে আসা গরুবাহী ট্রাকচালক রমিজ উদ্দিন বলেন, গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে যানজটে আটকে আছি। এমন রোদে গরুগুলোও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

কুমিল্লাগামী এশিয়া পরিবহনের পরিবহনের চালক তফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রতি বছর ঈদে এ কারখানার শ্রমিকরা বেতন ভাতার জন্য রাস্তা অবরোধ করে, এটা মালিকদের অবহেলা, বেতন না দিতে পারলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হোক। মহাসড়কে চলাচল করা গাড়িচালকেরা কি তাদের বেতন দেবে? এসব ঘটনায় প্রশাসন আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

শ্রমিক লিপু বলেন, আমরা পেটের দায়ে গার্মেন্টসে চাকরি করি। এই গার্মেন্টসে সব সময়ই বেতন আটকে রাখা হয়। বছরে কয়েকবার তিন-চার মাসের বেতন আটকানো হয়। মাসে ৯০ ঘণ্টা ওভারটাইম করলে ৩০-৩৫ ঘণ্টার বেতন দেয়, বাকি ওভারটাই কেটে নেয় তারা। ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি, এখনো আমাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া। এমনকি বোনাসও দেওয়া হয়নি। আমরা ঈদ করব কীভাবে?

তানিয়া নামের এক নারী শ্রমিক জানান, ঈদের আগে বাড়ি ভাড়ার টাকা না দিলে মালিক কলোনি (বাসা) থেকে বের করে দিবে। দুটি সন্তান নিয়ে বাড়ি যাব কীভাবে? হাত খালি। বকেয়া পড়ে আছে দোকানের মুদি মালের টাকা।

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব জানান, আজকের মধ্যেই তাদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করব আমরা। আমরা অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের তা বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়েছি। যানজট বাড়ছে। হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় কাজ করছে।

শিল্প পুলিশের কুমিল্লার পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে মহাসড়ক থেকে সরে গেছে শ্রমিকরা। প্রতিষ্ঠানটি শনিবার বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগেরদিনই সড়কে নেমেছে শ্রমিকরা। আমরা দুই পক্ষের সাথেই কথা বলেছি। এর একটা সমাধান হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, একদিকে সকাল থেকে চান্দিনায় সড়কে অবরোধ ছিল, অন্য দিকে জুম্মার নামাজের পর সড়কের ঢাকাগামী ও চট্টগ্রামগামী উভয় লেনে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে সড়কে থেমে থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় কাজ করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.