শৈশবের পর সন্তানের নৃত্যে আগ্রহ হারান অভিভাবকেরা

বিশ্ব নৃত্য দিবস

0
133
নৃত্যের মহড়া। গতকাল ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল এলাকায়।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নৃত্যের প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয় ময়মনসিংহের নৃত্যশিল্পী সিঁথি সাহা নিরুপমার। নাচ শিখেছেন ময়মনসিংহের বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে। বড় হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নাচ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশনেও নৃত্য করছেন।

ময়মনসিংহের বেশির ভাগ শিশু নৃত্যশিল্পীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। তাঁরা স্কুলের পড়ার সময়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নৃত্যচর্চা করলেও একটু বড় হওয়ার পর সামাজিক সমালোচনার ভয়ে ছেড়ে দেন বাধ্য হয়ে।

নৃত্যশিল্পী সিঁথি সাহা বলেন, ‘বড় হওয়ার পর নাচ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাবা-মায়ের সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমার সেটি আছে বলেই চালিয়ে যেতে পারছি। বিগত সময়ের চেয়ে এখন নাচের সুযোগ অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৃত্যকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা, এমনকি দেশের বাইরে গিয়েও পড়াশোনার সুযোগ আছে।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা মো. আরজু পারভেজ জানান, ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চার বছরের নৃত্য প্রশিক্ষণ কোর্সে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শেষ বর্ষে গিয়ে দেখা যায়, বড়জোর ১০ জন শিক্ষার্থী টিকে থাকে। একটু বড় হওয়ার পর থেকে অভিভাবকেরা নাচের প্রতি আর আগ্রহী থাকেন না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা নাচ ছাড়তে বাধ্য হয়।

ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন নৃত্য সংগঠনের কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেও নৃত্য নিয়ে এমন বাস্তবতার কথা জানা যায়। তারপরও ময়মনসিংহ নগরে শিল্পকলা একাডেমির পাশাপাশি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্তত ২০টি সংগঠন নৃত্য প্রশিক্ষণ একাডেমি করে নৃত্যশিক্ষা দিচ্ছে।

আজ শনিবার ময়মনসিংহে নানা আয়োজনে বিশ্ব নৃত্য দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ নৃত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় ১৮টি সংগঠনের ১৫০ জন নৃত্যশিল্পী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ হয়ে অংশ নেবেন।

এদিকে শিশু-কিশোরদের জন্য শিল্পচর্চা ও শেখার সবচেয়ে বড় সুযোগ করে দেয় ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি। এ একাডেমিতে বর্তমানে ছয় শতাধিক শিশু-কিশোর শিল্পকলার নানা বিষয় শিখছে। এর মধ্যে নৃত্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ১৫০ জন। শিল্পকলা একাডেমির বাইরেও ময়মনসিংহ নগরে থাকা অন্তত ২০টি নৃত্য সংগঠন কাজ করছে। ওই সব সংগঠনে আরও অন্তত ১৫০ জন নৃত্যশিল্পী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

নীথুয়া নৃত্য একাডেমির পরিচালক বাবলী আকন্দ  বলেন, ‘বেশির ভাগ সংগঠনের কোনো নিজস্ব কার্যালয় নেই। কিছু সংগঠনের ঘর ভাড়া করার সামর্থ্য থাকলেও অনেকের তা নেই। আমি নিজে একটি স্কুলের কক্ষে চর্চা করি। এ সংকটের পাশাপাশি বড় সংকট হচ্ছে, মেয়ে শিল্পীরা যখন পরিণত বয়সের দিকে যেতে থাকে, তখন পরিবারের চাপে নাচ ছেড়ে দেয়। যে কারণে ময়মনসিংহে পরিণত বয়সী নারী নৃত্যশিল্পী তেমন নেই। ছেলেরাও নৃত্যের প্রতি তেমন আগ্রহী হয় না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.