তুরস্কের দুই দফা নির্বাচনের মাঝের দুই সপ্তাহে নির্বাচনী প্রচারণার আতিশয্য কমেছে চোখে পড়ার মতো। এ পটভূমিতে আগামীকাল রোববার আগামী পাঁচ বছরের দেশের শাসনভার কার হাতে থাকবে, তা চূড়ান্ত করতে ভোট দেবেন তুরস্কবাসী।
দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এ কারণেই বুঝি অনেকেই প্রথম দফার নির্বাচনী উত্তেজনা ততটা বোধ করছেন না।
ইস্তাম্বুলের তোফানে এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে চা খেতে খেতে সোনের উগুরলু বলছিলেন, ‘এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি! মনে তো হচ্ছে শেষ হয়েও হয়নি শেষ। প্রথম দফা নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে, আবার এটাও জানি, রোববার আরেক দফায় ভোট হবে।’
এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি! মনে তো হচ্ছে শেষ হয়েও হয়নি শেষ। প্রথম দফা নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে, আবার এটাও জানি, রোববার আরেক দফায় ভোট হবে।
আবার ভোট দেবেন উল্লেখ করে উগুরলু আরও বলেন, তবু সবকিছু মিলে কেমন আজব লাগছে! দুই সপ্তাহ আগের ভোটের সেই উত্তাপ আর নেই।
অনেক ভোটারই বলছেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানই জিততে চলেছেন। আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ ২০ বছর পূর্ণ হবে। তবে দ্বিতীয় দফার ভোটে অপ্রত্যাশিত যে কিছু ঘটবেই না, এমনটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তাঁরা।
১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এরদোয়ান কার্যত বিশ্লেষক ও ভাষ্যকারদের অবাকই করে দেন। দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে তিনি ৫০ শতাংশের ‘বেড়া’ প্রায় টপকে যাচ্ছিলেন।
দ্বিতীয় দফার ভোটে এবার বিরোধী কেমাল কিলিচদারওলুর মুখোমুখি হচ্ছেন এরদোয়ান। সর্বশেষ ভোটের হিসাব অনুযায়ী, প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। আর কেমালের ঝুলিতে ভোট গেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। এরদোয়ান এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রথম দফায়ই জয় পেয়েছিলেন।
প্রথম দফা নির্বাচনের আগে অধিকাংশ জনমত জরিপ বলছিল, এরদোয়ানের দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। কিলিচদারওলুই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। তবে প্রত্যাশিত সেই ফলাফল না আসায় বিরোধীদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই নড়ে গেছে। বিরোধী প্রার্থীদের সমর্থকদের অনেকেই চুপসে গেছেন।
আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সরকার সেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েনি বলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এ অবস্থায় এরদোয়ানের হাত থেকে ক্ষমতার রশি ফসকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছিল।
চলমান আর্থিক সংকট ও ভূমিকম্পের পর সরকারের অবহেলা সত্ত্বেও এরদোয়ান এখনো ৫০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে আছেন। এখনো এরদোয়ানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে, এটা সত্যিই বিরোধী ভোটারদের জন্য হতাশাজনক।
ইস্তাম্বুলের চিহানগির ডিস্ট্রিক্টের একটি কাপড়ের দোকানের মালিক ওলকে বলেন, ‘১৪ মে নির্বাচনের আগে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম যে অবশেষে আমরা তাঁর (এরদোয়ান) কবল থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তাঁকে হটানো সম্ভব নয়।’
৩৪ বছর বয়সী এই নারী তাঁর পুরো নাম প্রকাশে রাজি হননি। প্রত্যেকেই এই লড়াই (এরদোয়ানকে হটানো) করতে করতে ক্লান্ত—এমন মন্তব্য করে ওলকে বলেন, ‘আবার পূর্ণ উদ্যমে ভোট দেওয়া কঠিন, কেননা সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, সব নির্ধারিতই হয়ে গেছে। তবে আমি অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে যাব, কারণ এটা আমার দায়িত্ব।’
বিরোধীদের মনোবল ভেঙে পড়া অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করেন ইস্তাম্বুলের সাবানচি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক বার্ক এসেন। তাঁর কথায়, চলমান আর্থিক সংকট ও ভূমিকম্পের পর সরকারের অবহেলা সত্ত্বেও এরদোয়ান এখনো ৫০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে আছেন। এখনো এরদোয়ানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে, এটা সত্যিই বিরোধী ভোটারদের জন্য হতাশাজনক।
অধ্যাপক এসেন আরও বলেন, শুধু তা–ই নয়, বিরোধী নেতারা ও জনমত জরিপ পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিরোধী ভোটারদের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছিল।
এদিকে এরদোয়ানের সমর্থকেরা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের নেতার হাতেই থাকছে দেশের আগামী পাঁচ বছরের শাসনভার। আগামী সোমবার ভোটের ফলাফর তাঁদের পক্ষেই আসবে।
উসমানীয়দের ইস্তাম্বুল জয়ের বার্ষিকীর (আগামী সোমবার) উল্লেখ করে ২২ বছর বয়সী ইস্তাম্বুলের শিক্ষার্থী ওসমান চাকির বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ১৪৫৩–এর বার্ষিকীতে আমরা দেখতে পাব, তিনিই (এরদোয়ান) আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকছেন।’
এরদোয়ানের সমর্থক ও বিরোধীদের সম্ভাব্য জয়–পরাজয়ের এমন প্রেক্ষাপটে অবশ্য তুরস্কের রাজপথে ভোটার উত্তাপ অনেকটাই মিইয়ে গেছে। ভাটা পড়েছে জনসংযোগে। নির্বাচনী সভার সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে।
তবে এ অবস্থার পরও ভাষ্যকাররা আশা করছেন, রোববারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ভালো থাকবে। প্রথম দফার মতো ৮৯ শতাংশ না হলেও তা ‘সম্ভবত ৮৪ বা ৮৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে’ মনে করেন সাবানচি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক বার্ক এসেন।
রোববার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।