শেয়ারবাজার ছাড়লেন আরও ১৫,৪৯৩ বিনিয়োগকারী

0
101
শেয়ারবাজার

টানা পতনে শেয়ারবাজার ছেড়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কেবল বাড়ছেই। মে মাসজুড়ে চলা পতনের কারণে মাত্র ১৯ কার্যদিবসে শেয়ারবাজার ছেড়েছেন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার বিনিয়োগকারী। তার বিপরীতে পুরো মাসে শেয়ারবাজারে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ৮ হাজার বিনিয়োগকারী। ফলে যত বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন, তার প্রায় অর্ধেক বিনিয়োগকারী নতুন করে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলে বাজারে যুক্ত হয়েছেন।

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ এপ্রিল শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫টি। আর মাসের শেষ কার্যদিবসে অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৮টিতে। অর্থাৎ মে মাসজুড়ে ১৫ হাজার ৪৯৩ জন বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।

শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কমেছে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা। মে মাসের শেষ কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে সক্রিয় তথা শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৩২৯টিতে। অথচ এপ্রিলের শেষ দিনে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৯টি। শেয়ারবাজারে যেসব বিও হিসাবে শেয়ার থাকে, সেগুলোকেই মূলত সক্রিয় বিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে মোট ১৯ কার্যদিবসের মধ্যে ১৪ দিনই বাজারে দরপতন হয়েছে। এ দরপতনে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারেরই দাম কমেছে। এমনকি লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের ক্রেতাসংকট ছিল। শেয়ারবাজারে দরপতন ঠেকাতে গত এপ্রিলে এক দিনে শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দিয়েছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দরপতন ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে তা হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দিয়েছে।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে দিনের শুরুতে পতন হলেই বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ ৩ শতাংশ কম দামে শেয়ার বিক্রি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তাতে লেনদেনের শুরুতেই কোম্পানিগুলোর বড় একটি অংশের দাম ৩ শতাংশ কমে যাচ্ছে। এতে ওই সব শেয়ারের আর ক্রেতা মিলছে না।

বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলতে থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একদিকে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা লোকসান কমাতে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণ সমন্বয় করতে জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেল করছেন। ফলে শেয়ারশূন্য হয়ে পড়া বিও হিসাবের সংখ্যা যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে।

শেয়ারবাজারে শেয়ারের দাম যত কমতে থাকে, ফোর্সড সেলও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে। নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নেমে গেলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ঋণ সমন্বয় করতে পারে। এটিই শেয়ারবাজারে ফোর্সড সেল নামে পরিচিত।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে সব মিলিয়ে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি ৩৩৩ পয়েন্ট বা সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। মে মাসের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৫৮৫ পয়েন্টের অবস্থানে। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২৫২ পয়েন্টে। এ কারণেই বেড়েছে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে শেয়ারবাজার ছেড়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। সিডিবিএলের হিসাবে, গত এপ্রিলেও প্রায় ১৬ হাজার বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়ে গিয়েছিলেন। সেই হিসাবে গত দুই মাসে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.