শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ ঠেকাতে দুই অ্যাপ বন্ধের চিন্তা

0
31
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এ বিষয় তুলে ধরা হয়ছবি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং অনলাইন বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে গত বুধবার যে ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের মধ্যে দেড় শতাধিক ব্যক্তি দুটি অ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখতেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এ বিষয় তুলে ধরা হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা হয় যে সরকার আপাতত রাতে অ্যাপ দুটির (টেলিগ্রাম ও বোটিম) ব্যবহারে গতি কমিয়ে দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই অ্যাপ বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

টেলিগ্রাম ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় অ্যাপ। টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল দুরভ রুশ বংশোদ্ভূত। অন্যদিকে বোটিম কথা বলা, ভিডিও কল ও অর্থ আদান–প্রদানের জনপ্রিয় অ্যাপ। বোটিমের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে।

বৈঠকে দুটি সংস্থার প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারেন।

কোর কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার যে ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মুঠোফোন জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে দেড় শ জনের বেশি টেলিগ্রাম ও বোটিম ব্যবহার করে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ ও সভায় যোগ দিতেন।

বৈঠকে দুটি সংস্থার প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারেন। এসব আলোচনা শেষে টেলিগ্রাম ও বোটিমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৫টি সিম থাকতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে। এখন একজনের নামে ১০টি সিম নেওয়া যায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বিগত ১৩ মাসে ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত’ ৪৪ হাজার ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩২ হাজার ৩৭১ জন জামিন পেয়েছেন। অর্থাৎ মোট প্রায় ৭৩ শতাংশ আসামির জামিন হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জামিন নিয়ে আলোচনা

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারের পর দ্রুত সময়ে কীভাবে জামিন পাচ্ছেন, তা নিয়ে কোর কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সূত্র জানিয়েছে, সভায় অংশ নেওয়া দুজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), জেলা আইনজীবী সমিতি ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করছেন। পরে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে, তাঁদের জামিনের বিষয়টি আরও সতর্কতার সঙ্গে দেখা হবে। একই সঙ্গে সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সতর্ক করা হবে, যাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জামিনের দিকটি গুরুত্বসহকারে দেখা যায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বিগত ১৩ মাসে ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত’ ৪৪ হাজার ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩২ হাজার ৩৭১ জন জামিন পেয়েছেন। অর্থাৎ মোট প্রায় ৭৩ শতাংশ আসামির জামিন হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জামিনের বিষয়ে আরেকটি মত রয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার। তবে কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে অপরাধে জড়ালে সেই তথ্যগুলো সঠিকভাবে আদালতের নজরে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ।

বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকারকর্মী নূর খান শনিবার বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোতে অনেক সাধারণ মানুষকে হয়রানিমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা জামিন পাবেন। সঠিকভাবে মামলা দায়ের ও তদন্ত করা জরুরি।

দুর্গাপূজা প্রসঙ্গ

বৈঠকে মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সাম্প্রতিক অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, আরাকান আর্মি বলছে, বাংলাদেশ আরসাকে সহযোগিতা করছে। আবার আরসা বলছে, বাংলাদেশ আরাকান আর্মিকে সহযোগিতা করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত বক্তব্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। না হলে তাদের অপপ্রচার সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী, র‌্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ অন্যরা।

সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, কোর কমিটির সভায় জাতীয় নির্বাচন, শারদীয় দুর্গাপূজা, মিয়ানমার, ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে গুজব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবেশী দেশ ও ফ্যাসিস্টের দোসরেরা নানাভাবে অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তবে সার্বিকভাবে পূজা ভালো হবে। এখন পর্যন্ত কোনো শঙ্কা নেই।

উপদেষ্টা বলেন, এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপে টহল বাড়ানো হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে বিমানবন্দরে কেন আটকানো হলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনো মন্তব্য করেননি। খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.