বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা–সদস্য, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গতকাল বুধবার দুটি আবেদন দাখিল করা হয়।
আশুলিয়ায় গত ৫ আগস্ট নিহত সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা মোছা. শাহীনা বেগম এবং নিহত আস–সাবুরের ভাই মো. রিজওয়ানুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দাখিল করেন। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় ১৩টি এবং চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে একটিসহ ১৪টি অভিযোগ করা হয়েছে।
পৃথক আবেদনে অভিযোগ গ্রহণ (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টারভুক্ত) করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বিধান অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। পৃথক আবেদনে ঘটনার তারিখ ও সময় ৫ আগস্ট অনুমান চারটা–সাড়ে চারটা এবং ঢাকা জেলার আশুলিয়া ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহত সজলের মায়ের করা আবেদনে শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের মায়ের অভিযোগের ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অনুমান বিকেল চারটা–সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সব পুলিশ সদস্য এবং ঢাকা ডিবি উত্তরের সদস্যরা অর্থাৎ ২৬ থেকে ৪০ নম্বর আসামিরা ১-৭ নম্বর আসামিদের আদেশে আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতাকে সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যে বিজয় উল্লাসরত ছাত্র–জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়ে বাদীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজল, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, আস-সাবুর ও বায়েজিদকে হত্যা করে এবং আশুলিয়া থানার সামনেই ভ্যানে নিহত ব্যক্তিদের লাশ পুলিশ পুড়িয়ে দেয়।
আর নিহত আস–সাবুরের ভাইয়ের করা আবেদনে শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের ভাইয়ের অভিযোগের ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অনুমান বিকেল চারটা–সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সব পুলিশ সদস্য এবং ঢাকা ডিবি উত্তরের সদস্যরা অর্থাৎ ২২ থেকে ৩০ নম্বর আসামিরা ১ থেকে ৭ নম্বর আসামিদের আদেশে আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যে বিজয় উল্লাসরত ছাত্র–জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়ে বাদীর ভাই আস-সাবুর, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, সাজ্জাদ হোসেন সজল ও বায়েজিদকে হত্যা করে এবং আশুলিয়া থানার সামনেই ভ্যানে নিহত ব্যক্তিদের লাশ পুলিশ পুড়িয়ে দেয়।
১ থেকে ৭ নম্বর আসামিদের পরিকল্পনা ও নির্দেশে অন্যান্য আসামি আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র–জনতাকে হত্যা করে তাঁদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলে তাঁদের সমূল বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধ বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।