ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ আসলে সব হাইড্রেটিং প্রোডাক্ট দিয়ে ত্বকে লেয়ার তৈরি করে আর্দ্রতা ধরে রাখার পদ্ধতি। লেয়ারিং শুরু হয় পাতলা ওয়াটার-বেসড প্রোডাক্ট দিয়ে, আর শেষ হয় ভারী ঘন ময়েশ্চারাইজারের লেয়ার দিয়ে। এতে ত্বকে পানি দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকা পড়ে। অতিশুষ্ক ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এর চেয়ে ভালো সমাধান হতেই পারে না।
বেশির ভাগ স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডের মতো ‘ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ’ টার্মটি এসেছে জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট রেডিট থেকে। তিন বছর আগে এটি সম্পর্কে প্রথম শোনা যায়, কিন্তু তখন কোনো কারণে খুব বেশি সবার নজরে আসেনি। এ বছরের শুরুতে আবার স্কিনকেয়ার রাডারে ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ নামটি বারবার দেখা যেতে থাকে। এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছেন জিউ স্কিনের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও শার্লট পালেরমিনো। এই স্কিন ইনফ্লুয়েন্সার তাঁর ইনস্টাগ্রাম রিলের মাধ্যমে মুখ এবং ঠোঁটের প্রোডাক্টগুলো দিয়ে লেয়ার তৈরি করে স্কিন ড্যাম্পেনিং করার সুফল তুলে ধরেন। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবখানে ডার্মাটোলজিস্ট থেকে শুরু করে স্কিনফ্লুয়েন্সার—সবাই এই স্কিনকেয়ার রুটিনের প্রশংসায় ভাসছেন।
ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ বানানোর পদ্ধতি
ইতিমধ্যে স্কিনকেয়ার এক্সপার্টরা ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বের করেছেন, যাতে রয়েছে অনেকগুলো ধাপ। কিন্তু স্কিনিমালিজমের যুগে অনেকেই বেশি ধাপের স্কিনকেয়ার রুটিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাদের জন্য শার্লট পালেরমিনোর ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ বানানোর পদ্ধতিটাই সবচেয়ে উপযোগী হবে।
প্রথম ধাপ:
ময়েশ্চার স্যান্ডউইচের প্রতিটি ধাপে আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটার শুরু হবে ক্লিনজারের মাধ্যমে। যেকোনো ত্বকচর্চার প্রথম ধাপ হলো ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করা। ময়েশ্চার স্যান্ডউইচ যেহেতু শুষ্ক ত্বকের জন্য, সেহেতু এ ত্বকের উপযোগী ক্লিনজার বেছে নিতে হবে। এমন ক্লিনজার, যা ত্বকের ধুলাবালু পরিষ্কার করার পরও সেখানে একটা ময়েশ্চার লেয়ার রেখে যাবে। তাই হাইড্রেটিং উপাদান, যেমন হায়ালুরনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, সেরামাইডস, অ্যালোভেরা ইত্যাদি আছে—এমন ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। মুখ ধোয়ার পর ত্বক মুছে একেবারে শুকিয়ে ফেলা যাবে না। হালকা ভেজাভাব রাখতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ:
এই ধাপ সিরামের জন্য। ত্বকে কোনো সমস্যা থাকলে ট্রিটমেন্টের জন্য এটি ব্যবহার করতে হয়। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে অবশ্যই হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করতে হবে। ক্লিনজারের মতোই হায়ালুরনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, সেরামাইডযুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে হবে। ভিটামিন ই ও পলিগ্লুটামিক অ্যাসিডও হাইড্রেটিং উপাদান হিসেবে বেশ কার্যকর। পলিগ্লুটামিক অ্যাসিড হায়ালুরনিক অ্যাসিডের চেয়ে চার গুণ বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখে। এ ছাড়া প্ল্যান্ট-বেসড উপাদান, যেমন আরগান অয়েল, অ্যালোভেরা, রোজহিপ অয়েল, সি কেল্প, জোজোবা আছে—এমন সিরামও শুষ্ক ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। রেটিনল ও ভিটামিন সিযুক্ত সিরাম ব্যবহারের আগে অবশ্যই ত্বক পুরোপুরি শুকিয়ে নিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ:
ময়েশ্চার স্যান্ডউইচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ময়েশ্চারাইজার বা হাইড্রেটর। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের জন্য ভারী ওয়াটার-বেসড ক্রিম বা জেল লাগাতে হবে। এর প্রধান উপাদান হিসেবে থাকতে হবে হায়ালুরনিক অ্যাসিড, ডাইমেথিকোন, গ্লিসারিন, প্রপিলিন গ্লাইকোল, সরবিটল, প্রোটিনস বা ইউরিয়া। এসব উপাদান ত্বক আর্দ্র করে। ময়েশ্চারাইজার বা হাইড্রেটরের সেকেন্ডারি উপাদানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যবহৃত জেল বা ক্রিমে ল্যানোলিন, মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম—তিনটি উপাদান বা এর কাছাকাছি কিছু থাকতে হবে। কারণ, এগুলো ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সহায়তা করে।
শেষ ধাপ:
একদম শেষ ধাপ হচ্ছে ভারী ফেসিয়াল অয়েল বা বাটার লাগানো। এতে ময়েশ্চার পুরোপুরি লক হয়। এখানে নিজের পছন্দমতো অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, স্কোয়ালেন অয়েল, রোজহিপ অয়েল, মারুলা অয়েল, আমন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল, আরগান অয়েল। এ ছাড়া ব্যবহার করা যেতে পারে শেয়া বাটার বা ম্যাংগো বাটার। এ বাটারগুলো ননস্টিক। খুব সহজে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ময়েশ্চার লক করে দেয়। বাড়তি পুষ্টির জন্য অয়েল বা বাটারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন ও ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। হাতের কাছে যদি আর কিছুই না থাকে, তাহলে এই ধাপে আমাদের অতি বিশ্বস্ত ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিতে পারেন।