চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে একটি শিশুকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারার পর ওই একই হাতি পাশের উপজেলায় এক চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিকে আছড়ে মেরেছে। শিশুটি আজ বুধবার সকালে নাচোলের নেজামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মানিকড়া গ্রামে মারা যায়। অপরজন মারা যান আজ বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার ধামধুম গ্রামে। তাঁর নাম রামপদ সরদার (৪৮)। তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ওরাওঁ সম্প্রদায়ের সদস্য। তিনি তানোরের বাধাইর ইউনিয়নের জমারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মারা যাওয়া শিশুটির নাম মো. মোফাশ্বির। সে লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক বুলবুল আহমেদের ছেলে। লক্ষীপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত মোফাশ্বির।
স্থানীয় লোকজন জানান, হাতিটি দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নাচোলের মানিকড়া গ্রামের পাশে ধানখেতে থাকার পর তানোর উপজেলার ধামধুম মৌজার দিকে চলে যায়। সেখানে বেলা তিনটার দিকে ধানখেতে ঘাস কাটতে যাওয়া রামপদ সরদারকে শুঁড় দিয়ে ধরে ধানখেতে পা দিয়ে চেপে মেরে ফেলে হাতিটি। পরে তাঁকে এলাকার দুজন উদ্ধার করে সদর উপজেলার আমনূরায় মডার্ন ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় জানান, হাতিটি এখন ধামধুম মৌজার একটি জঙ্গলে অবস্থান করছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস এবং নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও তানোর থানার পুলিশ ধামধুম এলাকায় অবস্থান করছে। নিহত রামপদ সর্দারের লাশ তাঁর বাড়িতে রয়েছে। আশপাশের এলাকার মানুষজনের মধ্যে ভীতি কাজ করছে।
নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান জানান, শিশু মোফাশ্বিরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নাচোলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দিন ধরে দুটি হাতির মাধ্যমে এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন মাহুতেরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে একটি গাছের ডালের সঙ্গে দুটি হাতি বেঁধে রেখে মাহুতেরা স্থানীয় আমনূরা বাজারে খেতে যান। এসে দেখেন যে হাতি দুটি ডাল ভেঙে পালিয়ে গেছে।
নাচোল ও সদর থানা-পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সদর উপজেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-আমনূরা সড়কে ধিনগরের কাছে হাতির সামনে পড়ে একটি ইজিবাইক যাত্রীসহ রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। কয়েকজন কিছুটা আহত হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মানুষজন হাতি ও মাহুতের দিকে ইট–পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে উদ্ভ্রান্ত হয়ে হাতি ছুটতে ছুটতে নাচোলের শগুনা এলাকার একটি ধানখেতে নেমে পড়ে। মাহুতেরা হাতি দুটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পিঠের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচান। আজ সকালে একটি হাতিকে বেঁধে ফেলতে পারলেও অপর হাতিটিকে বুধবার সকালে নাচোলের মানিকড়া গ্রামের পাশে একটি আমবাগানে দেখা যায়। উৎসুক জনতার সঙ্গে শিশু মোফাশ্বিরও হাতি দেখতে বাগানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ক্ষিপ্ত হাতিটি শুঁড় দিয়ে ধরে মোফাশ্বিরকে আছাড় দেয়। পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে আমনূরার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে নাচোল থানার এসআই মাইনুল ইসলাম আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুরে সার্কাস করার পর হাতি দুটিকে এই এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য নিয়ে আসা হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজশাহী মোহনপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খন্দকার সাগর আহমদের নেতৃত্বে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও রাজশাহীর একটি দল হাতিটিকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তারা ট্রাংকুলাইজার গান দিয়ে চেতনানাশক ইনজেকশন হাতির গায়ে বেঁধাতে পারেনি। অন্য ছোট হাতিটিকে মাহুতেরা সকালে ধরে নাচোলের সগুনা এলাকায় একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন। চারজন মাহুত পুলিশের হেফাজতে থেকে হাতি ধরার চেষ্টায় আছেন।
নাচোলের লক্ষ্মীপুরে মোফাশ্বিরের বাড়িতে গেলে গেলে তার চাচা মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় প্রায়ই হাতি নিয়ে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়। প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, ভবিষ্যতে হাতি নিয়ে এমন চাঁদাবাজির ঘটনা যেন আর না ঘটে। আর কোনো প্রাণহানি যেন না হয়।’