শিশুকে গর্তে পুঁতে মুক্তিপণ দাবি করা দুই রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার

0
5
গ্রেপ্তার দুজন, ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারে ছয় বছরের শিশুকে অপহরণের পর মাটিতে পুঁতে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নুর ইসলাম (২১) ও মো. সালাম (২০। তাঁরা দুজন সম্পর্কে ভাই। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা পুলিশ ও এপিবিএনের যৌথ অভিযানে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের এফ ব্লক থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
 
গ্রেপ্তার নুর ইসলাম ও মো. সালাম কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের এফ ব্লকের মৃত নুরুল হকের ছেলে। অহরণের শিকার হওয়া শিশুটির নাম মোহাম্মদ আরাকান (৬)। সে থাইংখালী-১৯ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের সি ১৫ ব্লকের বাসিন্দা আবদুর রহমান ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। ৮ জানুয়ারি আরাকান ক্যাম্পের খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর ১০ জানুয়ারি তার মা-বাবা অপহরণকারীদের কাছ থেকে একটি ভিডিও বার্তা পান।
 
উখিয়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএনের) ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক খন্দকার ফজলে রাব্বি বলেন, শিশু মোহাম্মদ আরাকানকে অপহরণের পর তাঁকে গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করা হয়। সেই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পরিবারটি ভীত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে না জানিয়েই মুক্তিপণ দিয়ে শিশুকে উদ্ধার করে। তবে ছয় বছরের শিশুকে নির্মম নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ এপিবিএন ব্যাটালিয়ন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তিনি আরও বলেন, গতকাল জেলা পুলিশের সহযোগিতায় অপহরণে সরাসরি জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর শিশু আরাকান আসামিদের শনাক্ত করেছে। পরে আসামিদের থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
 
শিশুকে অপহরণের বিষয়টি নিয়ে ১৫ জানুয়ারি ‘ভিডিও ভাইরাল, শিশুকে গর্তে পুঁতে মুক্তিপণ দাবি’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে আরাকানের বাবা আবদুর রহমান দাবি করেন, ‘অপহরণকারীরা টাকার জন্য ছেলেকে মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করে। আমার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। এরপরও তাকে না ছাড়ায় আশ্রয়শিবিরের আত্মীয়স্বজনসহ অন্য লোকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠাই।’
 
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, ৮ জানুয়ারি বিকেলের দিকে এপিবিএন অফিসসংলগ্ন খেলার মাঠ থেকে ছোলা-মুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে আরাকানকে নিয়ে যায় দুই ভাই নুর ইসলাম ও সালাম। ওই দিন তাঁদের সঙ্গে মো. সাদেক নামের আরও একজন ছিলেন। তিনি বর্তমানে পলাতক। জসিম উদ্দিন বলেন, ১০ জানুয়ারি দুটি মুঠোফোন থেকে কল দিয়ে আরাকানের বাবা আবদুর রহমানকে বলা হয়, সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেলে ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। জেলা পুলিশ ও এপিবিএনের তৎপরতায় ১৪ জানুয়ারি অপহরণকারীরা শিশু আরাকানকে উখিয়ার কুতুপালং বাজারের কাছে এমএসএফ হাসপাতালের সামনে ফেলে রেখে চলে যায় বলে দাবি করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন।
 
জানতে চাইলেও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, অপহৃত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান।
 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিশুটির চোখেমুখে ভয়। গলা পর্যন্ত মাটিতে ডুবে আছে। চাপা দেওয়া হয়েছে শরীরের ওই অংশ। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা ভাষায় শিশুটি তার বাবার উদ্দেশে বলছিল, ‘আব্বা তরাতরি চেষ্টা গর। মরে গাতত গলায় পিল্লে। টিয়া দে। (বাবা দ্রুত চেষ্টা করো, আমাকে গর্তে পুঁতে ফেলেছে, টাকা দাও)।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.