লুট করা মুঠোফোনের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন, আদালতে দুজনের জবানবন্দি

0
107
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নিহত সুলতানা সুরাইয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই যুবক। বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ে

লুণ্ঠিত মুঠোফোনের সূত্র ধরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সুলতানা সুরাইয়া (৬৫) হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আজ বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তার ওই আসামিরা হলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকার মো. শাজাহানের ছেলে মো. লাবু (২৯) ও ভূঞাপুর উপজেলার পশ্চিম ভূঞাপুর গ্রামের সিরাজ আকন্দের ছেলে আল আমিন আকন্দ (২২)।

নিহত সুলতানা সুরাইয়া ভূঞাপুর পৌরসভার পশ্চিম ভূঞাপুর গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম আকন্দের স্ত্রী। তাঁর ছেলে মো. আবু সায়েম আকন্দ ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। সুলতানা সুরাইয়া বাড়িতে একাই বসবাস করতেন।

১৪ সেপ্টেম্বর কয়েকবার নিহত সুরাইয়ার মুঠোফোনে কল করেন তাঁর এক মেয়ে। মাকে না পেয়ে তিনি স্বজনদের জানান। পরে স্বজনেরা বাড়িতে গিয়ে সুলতানা সুরাইয়ার গলাকাটা লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন নিহত সুরাইয়ার ছেলে আবু সায়েম আকন্দ বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর নিহত সুরাইয়ার মুঠোফোনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) টাঙ্গাইলের একটি দল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিটিআইএর পরিদর্শক মোস্তফিজুর রহমান আনছারী বলেন, একটি ফোন কয়েক মিনিট সচল ছিল। মুঠোফোনটি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চাকুলি বনবাড়িয়া গ্রামের এক নারী চালাচ্ছিলেন। পিটিআইএর তদন্ত দল তাঁর কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করে। ওই নারী জানান, অপরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ফোনটি কিনেছেন। পরে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকার মো. লাবু ফোনটি ওই নারীর কাছে বিক্রি করেছিলেন। লাবুকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়। লাবু স্বীকার করেন তিনি ও আল আমিন সুলতানা সুরাইয়ার ঘরে চুরি করতে গিয়েছিলেন। চিনে ফেলায় ছুরি দিয়ে গলা কেটে তাঁকে হত্যা করেন। পরে ভূঞাপুর থেকে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান আনছারী বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মুঠোফোন ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা ছিল। তাঁরা ফোনটি চুরি করার পর সিম কার্ড খুলে যমুনা নদীতে ফেলে দেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, সিম ফেলে দিলে বা অপরিচিত কারও কাছে ফোন বিক্রি করলে কেউ ধরা পড়বে না।

সংবাদ সম্মেলনে পিটিআইএর টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সিরাজ আমিন বলেন, গ্রেপ্তার লাবুর শ্বশুরবাড়ি ভূঞাপুরে সুরাইয়ার বাড়ির পাশে। সেখানে তিনি প্রায়ই যাতায়াত করতেন। নিহত সুরাইয়া তাঁকে দিয়ে বাড়ির ঘাস কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিয়েছেন। আর আল আমিন সুরাইয়ার আত্মীয়। তাঁকে দিয়েও সুরাইয়া বিভিন্ন কাজ করাতেন। তাঁরা জানতেন, সুরাইয়ার ঘরে সব সময় কিছু টাকা থাকে। সেই টাকা চুরির উদ্দেশ্যেই ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর ঘরে ঢুকেছিলেন। সুলতানা তাঁদের দেখে চিৎকার দেন। এ সময় আল আমিন গামছা দিয়ে তাঁর গলা পেঁচিয়ে ধরেন এবং লাবু গলায় ছুরি চালান। পরে লাবু সিরাজগঞ্জে চলে যান এবং আল আমিন নিজ বাড়িতে চলে যান।

পুলিশ সুপার সিরাজ আমিন আরও বলেন, তাঁরা দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম দুজনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.