শিক্ষকের অধিকাংশ পদই শূন্য

0
178
বরগুনা সরকারি কলেজের সুনসান পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস। সম্প্রতি

এই কলেজে ৪৭টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ২১ জন। অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই।

কলেজ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬৯ সালে বরগুনা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজে নতুন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি। পুরোনো জনবল দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। কয়েক যুগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়েছে বিষয় ও উচ্চশিক্ষার পরিধি। বর্তমানে এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও ডিগ্রি (পাস কোর্স) পড়ানো হয়। সব মিলিয়ে মোট ১৫টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে আটটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এগুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, দর্শন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে দর্শন ছাড়া অন্য সাতটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় নয় হাজার। এখানে ৪৭টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ২১ জন।

কলেজের শিক্ষার্থীর জন্য দুটি হোস্টেল রয়েছে। এর মধ্যে ১০৯ আসনের ছাত্রদের হোস্টেলটি পরিত্যক্ত। ছাত্রীদের জন্য নির্মিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা হোস্টেলে ১২০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। এখানে ১০৯ শিক্ষার্থী রয়েছেন। হোস্টেল পরিচালনার জন্য কলেজ থেকে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় না।

কলেজ কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, স্নাতক (সম্মান) কোর্সের প্রতিটি বিভাগেই শিক্ষকসংকট রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা বিভাগে শিক্ষকের চারটি পদের মধ্যে তিনটি, ইংরেজি বিভাগে চারটির মধ্যে একটি, অর্থনীতি বিভাগের চারটির মধ্যে চারটি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চারটির মধ্যে একটি, দর্শন বিভাগে পাঁচটির মধ্যে তিনটি, ব্যবস্থাপনা বিভাগে চারটি পদের মধ্যে চারটিই এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চারটি পদের মধ্যে দুটি এবং  হিসাববিজ্ঞানে চারটি পদের মধ্যে একটি পদ শূন্য। এ ছাড়া  প্রাণিবিদ্যা বিভাগে দুটি, গণিত বিভাগের দুটি, পদার্থবিজ্ঞানে  দুটি, ইতিহাস বিভাগে  একটি, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে একটি, রসায়ন ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে একটি করে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

আমরা শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ ও নতুন পদ সৃষ্টির জন্য তদবির করছি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাইরে থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কোনো রকম ক্লাস চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মতিউর রহমান, অধ্যক্ষ, বরগুনা সরকারি কলেজ নাম প্রকাশ না করা শর্তে এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন আমাদের ছয়টি বিষয়ের পাঠদান হওয়ার কথা থাকলেও দুই থেকে তিনটির বেশি হয় না। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বাধ্য হয়ে বাইরের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকের চারটি পদ থাকলেও প্রভাষকের দুটি পদ শূন্য। অথচ এ বিভাগে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন।

এই বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোরসালিন বলেন, ‘আমাদের বিভাগে নিয়মিত ক্লাস হয় না। প্রতি সপ্তাহে দুটি ক্লাস নেওয়া হয়। আবার কোনো সপ্তাহে ক্লাস হয় না। মাসে চার থেকে পাঁচটা ক্লাস হতে পারে। যেভাবে লেখাপড়া হওয়ার কথা, সেভাবে হয় না। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার কারণে পরীক্ষায় ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। কলেজে ক্লাস হলে বাড়িতে আমাদের পড়ার তাগিদ থাকে। ক্লাস না হওয়ায় সেটা আর হয় না।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবিব বলেন, দুজন শিক্ষক দিয়ে এতসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠদান করানো খুবই কঠিন। বিভাগের শূন্যপদগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলা বিভাগের চারজন শিক্ষকের মধ্যে আছেন মাত্র একজন। এ বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। বিভাগীয় প্রধান শিরীন সুলতানা বলেন, দুজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস নেওয়া হয়। দুজনের একজন বরগুনা সদর আইডিয়াল কলেজের এবং একজন পাথরঘাটা সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে।

অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকের চারটি পদের সব শূন্য। এই বিভাগের শিক্ষক না থাকায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগে প্রধান মঞ্জুরুল হাসান দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকসংকট থাকায় এই বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। এই বিভাগ স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, প্রতিদিন তাঁদের ছয়টি বিষয়ে পাঠদানের কথা থাকলেও শিক্ষক না থাকায় দুই থেকে তিনটি বিষয়ে পাঠদান হয়।

কয়েকজন শিক্ষক বললেন, এখানে শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা নেই। কোনো কারণে বদলি হয়ে কলেজে এলেও অনেকেই দু-এক মাসের মাথায় বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এখানে শিক্ষক ধরে রাখতে হলে কলেজের নিজস্ব আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক পদায়ন করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষকসংকট থাকবে না।

শিক্ষকসংকট প্রসঙ্গে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বরগুনা সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রতি মাসে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠাচ্ছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.