শিক্ষকদের অবরুদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

0
24
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে

কম্বাইন্ড বা সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এ ঘটনার পর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, আজ বেলা বেলা ১১টায়  কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শিক্ষার্থীদের আগামীকাল (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে হল ত‍্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সব শিক্ষার্থী লাঠিসোঁঠা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মহড়া দিলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাত সাড়ে ১১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

এর আগে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান একদল ব্যক্তি। রাত পৌনে আটটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি পূরণ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে বেলা ১টা থেকে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছিলেন ওই শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সৈয়দ শাহনেওয়াজ মোর্শেদ অপু। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি হাতে হামলা চালায় একদল ব্যক্তি। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তারা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের তালা খুলে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের বের করে দেয়।
হামলাকারীদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হঠাৎ করে দেখি, ভিসি স্যারের বাসভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে অনেক লোক আসছে এবং অডিটরিয়ামের ডান পাশ থেকে অনেক চিৎকারও আসছিল। পরে দেখি, ওখানে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মারছে। তারপর সবাই লাইব্রেরিতে আশ্রয় নিই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামানের দাবি, অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা তাঁদের তালা ভেঙে বের করেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা আমাদের আটক করে রাখল। শিক্ষক সমিতির সদস্যরা জরুরি মিটিং করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, শিক্ষকদের আটক করে রাখার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে আমরা অংশগ্রহণ করব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি সবচেয়ে পরে বের হয়েছি। বের হয়ে দেখলাম যে কয়েকজন লোক লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বহিরাগত ছিলেন, নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, সেটি আমি বুঝতে পারিনি। কারণ, তখন রাত হয়ে গিয়েছিল।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’র (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি) দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা ১১টায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এ সভায় কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর পাশাপাশি পশুপালন ও ভেটেরিনারি ডিগ্রিও চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মোট তিনটি ডিগ্রি চালু রাখার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের দুই শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। সভা শেষে তিন ডিগ্রির সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়া হলে ‘এক পেশায় এক ডিগ্রির (কম্বাইন্ড ডিগ্রি)’ দাবিতে মিলনায়তনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়াসহ অন্য শিক্ষকেরা।

বিজিবি মোতায়েন

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোববার রাত ১০টা ১০মিনিট থেকে ২ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়। রাত ১১ টা ৫ মিনিটে বিজিবি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে জেলা প্রশাসকে অনুরোধক্রমে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) থেকে দুই প্লাটুন বিজিবি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান ৩৯ বিজিবির অধিনায়ক ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল মেহেদী হাসান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.