পাহাড়ে টানেলের মধ্য দিয়ে এক ট্রেনেই সমতল থেকে সিকিম

0
127
পাহাড়ে টানেলের মধ্য দিয়ে যাবে ট্রেন

খুব শিগগিরই ভারতের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে চীন, নেপাল ও ভুটান সীমান্ত ঘেষা পাহাড়ি রাজ্য সিকিম। এবার এক ট্রেনেই সমতল থেকে সিকিমের পাহাড়ে পৌঁছে যাবেন পর্যটকেরা। পশ্চিমবঙ্গের সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে রেলপথ। বর্তমানে এ রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। গোটা ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সিকিমকে যুক্ত করতে ২০০৮-২০০৯ সালে সিকিম রংপো রেল প্রকল্প হাতে নেয় রেল মন্ত্রণালয়। এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ।

এই রেলপথ চালু হলে ওই এলাকার যাতায়াতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর জেরে ট্যাক্সি চালকদের দৌরাত্ম থেকে মুক্তি পাবেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিম যাওয়া যেমন অনেক সহজ হবে, তেমনি পণ্য পরিবহনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই রেলপথ।

টানেলের ভেতর দিয়ে রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে 

 

বর্ষার সময় ধসের কারণে সিকিমগামী একমাত্র জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেই সময় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সিকিম। এই রেলপথ তৈরি হলে সেই অবস্থা বদলে যাবে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে সেবক-রংপো রেলপথ। ফলে ভারতের যেকোনো প্রান্ত কিংবা ঢাকা থেকে এক ট্রেনেই পৌঁছে যাওয়া যাবে সিকিমে। সিকিমের পর্যটনভিত্তিক অর্থনীতিতে আসবে জোয়ার। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়েও এর গুরুত্ব রয়েছে। সিকিমের বড় অংশজুড়ে রয়েছে চীন সীমান্ত। সিকিম শেষ হলেই চীনের এলাকা শুরু হয়ে যায়।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে সম্প্রতি সেবক রংপো রেল প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন দার্জিলিংয়ের সংসদ সদস্য রাজু বিস্ত। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প নিয়েছেন। এ  প্রকল্প শেষ হলে সরাসরি ট্রেনে করেই সিকিমে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন পিএসইউ আইআরসিওএন ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প পরিচালক মহিন্দর সিং বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। অত্যন্ত যত্নসহ কাজটি করা হচ্ছে। কারণ পুরো প্রকল্পটি সিসমিক ফোর এবং ফাইভ জোনে পড়ে যা প্রচণ্ড ভূমিকম্প প্রবণ। এছাড়া এখানে সব সময়ই ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা থাকে। নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য রেখে ভারতীয় রেলের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এই রেললাইনকে পরে গ্যাংটক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।

৪৫ কিলোমিটার সেবক-রংপো রেলপথের অধিকাংশ অংশই যাবে পাহাড়ি টানেলের মধ্যে দিয়ে। প্রায় ৩৮ কিলোমিটার রেলপথই থাকবে টানেলের মধ্যে দিয়ে। এই রেলপথের জন্য মোট ১৪টি টানেল, ২২টি ব্রিজ তৈরি করেছে রেল। এর মধ্যে দীর্ঘতম টানেলটি তিন কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা।

টানেল

 

পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার তারখোলা ও টুংলাংখোলার মধ্যে এই টানেলের কাজও এরই মধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রকল্পে ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি রুপি। মনে করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের শেষে যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই রেলপথ।

এদিকে এই রেলপথ চালু হলে ট্যাক্সি চালকদের হাতে পর্যটকদের জিম্মি হওয়ার ভোগান্তিও কমবে বলে আশা করছেন অনেকেই। ভারতের দেশি পর্যটকদের কাছে তো বটেই বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছেও দিনে দিনে জনপ্রিয় পর্যটন

স্পট হয়ে উঠেছে সিকিম। বর্তমানে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে কিংবা সড়কপথে উত্তরবঙ্গের বাংলাবান্ধা, হিলি সীমান্ত হয়ে যাওয়া যায় সিকিমে। আবার অনেক পর্যটক কলকাতা থেকে ট্রেনে, বাসে, কিংবা বিমানে বাগডোগরা, শিলিগুড়ি বা এনজিপি হয়ে সিকিম পাড়ি দেন। দ্রুত যাতায়াতের সুবিধার জন্য বছর চারেক আগে সিকিম গোটা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আকাশ পথেও।

তবে পাহাড়ের খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে বছরের একটা বড় সময় আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকে। বিমানের ভাড়াও সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। ফলে সিকিম ঘুরতে আসা ৯৯ শতাংশ পর্যটককে যেকোনো পরিবহন ব্যবস্থায় আসতে হয় নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়িতে।

পর্যটকদের অভিযোগ- এরপরই শুরু হয় ট্যাক্সি চালকদের হয়রানি। দেশি কিংবা বিদেশি, শিলিগুড়ির সমতল থেকে পর্যটকদের সিকিমের পাহাড়ে ঘুরতে শিলিগুড়ি পৌঁছেই সইতে হয় স্থানীয় ট্যাক্সি চালকদের দৌরাত্ম। পর্যটন মৌসুমে ২ হাজার রুপির ভাড়া চাওয়া হয় দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেশি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.