তিন দফা দাবিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা গতকাল শনিবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ, জুলাইয়ের সনদ ঘোষণা করা ও অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে তাঁরা সেখানে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা তিন দিন ধরে আন্দোলনের পর গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য দলের নেতা–কর্মীরা শাহবাগ ছাড়েন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরাও তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। তবে তাঁরা শাহবাগ ছাড়েননি। একই মঞ্চে অবস্থান নেন আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। চারটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন জুলাইয়ের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ফলে শাহবাগ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফার্মগেট ও সায়েন্স ল্যাব সড়কের যানবাহন মৎস্য ভবন মোড় হয়ে হেয়ার রোড দিয়ে চলাচল করছে।
জুলাইয়ে আহত আবু হাসান বলেন, ‘দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করলেই আমরা চলে যাব না। আমরা দাবির বাস্তবায়ন চাই। আমরা জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি নিয়েই বাড়ি ফিরব। আমাদের রক্তের ওপর দিয়েই আজকে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা ক্ষমতায় বসেছেন। অথচ তাঁরা আহত যোদ্ধাদের দাবি পূরণ করতে পারছেন না।’
জুলাইয়ে আহত নাজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবন দিয়ে দেশের জন্য লড়াই করেছিলাম, আমরা উপদেষ্টা হতে চাই না। আমরা আমাদের সুচিকিৎসা চাই।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। পিলখানা হত্যার বিচার করতে হবে। জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।’

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান নাজির আহমেদ। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আহত যোদ্ধা যাঁরা আছেন, আপনারা সবাই নেমে আসুন।’
আহত ব্যক্তিদের আরেকজন মোহাম্মদ শাকিল বলেন, ‘আপনারা কেন এখনো আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না? এখনো অসংখ্য আহত হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এই সরকারকে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’
মোহাম্মদ আপন নামের আরও একজন আহত ব্যক্তি জানান, গতকাল রাতেও তাঁরা এখানেই অবস্থান করেছেন। হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে তাঁরা এখানে এসেছিলেন, কিন্তু তাঁদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। তাই শাহবাগেই অবস্থান করছেন।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে, যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন।
পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগের জমায়েতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সোমবার সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর আনন্দমিছিল করা হবে। এরপর সেখান থেকে এনসিপি ও অন্যান্য দলের নেতা–কর্মীরা সরে যান। তবে আহত ব্যক্তিরা সেখানেই অবস্থান করেন।