জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকার শাহবাগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সমাবেশস্থলে আসছেন নেতা-কর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন সমাবেশস্থলে দেখা যায়, শাহবাগ চত্বরে টিএসসির দিকে মুখ করে মঞ্চ বানানো হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সমাবেশস্থলে অবস্থান করছেন। বেলা ২টা থেকে মূল সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা।
সমাবেশস্থলের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শাহবাগ থেকে কাঁটাবন মোড়, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল মোড়, শাহবাগ থানা হয়ে মৎস্য ভবন পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এসব সড়কে যাতায়াত করা যানবাহনগুলোকে বিকল্প পথে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালমুখী অ্যাম্বুলেন্সকে যেতে দেওয়া হচ্ছে।

সংগঠনের নেতা–কর্মীরা কপালে ও মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে, ছাত্রদলের নাম ও লোগোযুক্ত ব্যান্ড পরে সমাবেশস্থলে আসছেন। ছাত্রদল ও বিএনপির দলীয় পতাকা হাতেও অনেককে দেখা গেছে।
সমাবেশস্থলে ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘তারেক রহমানের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতা–কর্মীরা।
বরিশাল থেকে এসেছেন ছাত্রদল নেতা রহমতউল্লাহ। গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন তিনি। রহমতউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাবেশ থেকে একটাই দাবি, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ যেন কার্যকর করা হয়।’
ছাত্রদলের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষকে মুক্তি দিয়েছি। ফ্যাসিবাদ থেকে সবাইকে উদ্ধার করেছি। আমাদের এখন নিরাপত্তা দেওয়ার সময়। এটা আজকের ছাত্রসমাবেশে আমার দাবি।’

রাজধানীর পল্লবী থেকে এসেছেন ইয়াহিয়া কাজল। তিনি জিয়া সাইবার ফোর্সের সদস্য। ইয়াহিয়া বলেন, ‘যেহেতু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খুনি হাসিনার পতন হয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার সমাবেশে আসতে পেরে আসলেই খুব ভালো লাগছে। আমরা আশা করি আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান শিগগিরই ফিরে এসে দেশের হাল ধরবেন।’
ইয়াহিয়া কাজল বলেন, আগামী দিনে ছাত্র-জনতা দেশ গঠনে কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে, সেই দিকনির্দেশনা তারেক রহমান দেবেন।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভ সকালেই শাহবাগে এসে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘আশা করছি তারেক রহমান দেশ, জাতি এবং ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ছাত্রদলকে নির্দেশনা দেবেন। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব, ইনশা আল্লাহ।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি অতীতে কলুষিত ছিল। তার বিপরীতে একটি সুনির্দিষ্ট, গ্রহণযোগ্য, ইতিবাচক রাজনীতি থাকবে বলে ছাত্রদল প্রত্যাশা করে।’

আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সঞ্চালনা করবেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন।

এদিকে সমাবেশের কারণে শাহবাগ ও আশপাশের সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শিশুসন্তানকে নিয়ে রাজধানীর মালিবাগ থেকে শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল। শিশুকে কোলে নিয়ে হেঁটে বাসার পথ ধরেছেন তিনি।
মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘আমার বাসা মালিবাগে। রাস্তা বন্ধ থাকায় বাচ্চাকে নিয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে ঘুরপথে হাসপাতালে এসেছি। ফেরার পথে এখন মৎস্য ভবন পর্যন্ত হেঁটে যেতে হচ্ছে। এরপর গাড়ি পেলে মালিবাগ যাব।’