
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রার সময় প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ঘটনা তদন্তে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছে এসে এই দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তোমরা আমার পরম স্নেহের। আমার ছেলের বয়সও তোমাদের বয়সের চেয়ে বেশি। তোমাদের এই কষ্ট আমাকেও কষ্ট দেয়।’
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিনটি মূল দাবির সঙ্গে আরেকটি দাবি রয়েছে রংপুরে একজন প্রকৌশলীকে আটকে রেখে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘রংপুরে যে ঘটনা, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আমি এখানে আসার আগে কথা বলেছি। সেখানে একটা জিডি হয়েছে। এই জিডির আসামিকে ধরার জন্য ওনার সঙ্গে কথা বলেছি। উনি আমাকে কথা দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
এ সময় ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে অত্যন্ত দুঃখিত এবং দুঃখ প্রকাশ করছি। আজকের এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য একটা তদন্ত কমিটি আমি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) গঠন করে দেব।’
প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এগুলো হলো—ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার বন্ধ করা, কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা এবং দশম গ্রেডে চাকরির ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া। এসব দাবিতে গতকাল বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে শাহবাগ ছাড়ার সময় আজকে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ করে শাহবাগে অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাত্রার কর্মসূচি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
সে অনুযায়ী আজ বেলা ১১টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগের মূল সড়কে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ ও আশপাশের সব সড়ক অচল হয়ে পড়ে। বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে অগ্রসর হলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার এসে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার আগে আজ রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এর জন্য ক্ষমা চাইবেন পুলিশের প্রতিনিধি।’
আলোচনার জন্য সরকারের দরজা খোলা রয়েছে জানিয়ে ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘কথায় কথায় যমুনা অভিমুখে যাত্রা অনভিপ্রেত।’