বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নির্বিচার নিধনের কারণে দেশের হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী থেকে চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে বাগাড়। মাছটি কমে যাওয়ায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএন এটিকে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতি থেকে এই মাছ যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২–এর তফসিল-২–এ মাছটিকে সংরক্ষিত করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী বাগাড় মাছ ধরা, মারা, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা আমদানি-রপ্তানি দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিপন্ন বাগাড় মাছ সুরক্ষায় বিভাগ থেকে সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। জেলা শহরের পশ্চিম বাজার, সদর উপজেলার কুশিয়ারাপারের শেরপুর মৎস্য আড়ত, রাজনগর, জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা, সিলেটের বিয়ানীবাজার, হাকালুকি হাওরপারের হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এই ঢোল পেটানো হয়। এ সময় হ্যান্ডমাইকে বাগাড় মাছ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়ে। খুচরা মাছ বিক্রেতা, ক্রেতা ও আড়তদারের হাতে প্রচারপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি প্রচারণামূলক স্টিকারও লাগানো হয়েছে।
পৌষসংক্রান্তিতে গত শুক্র ও শনিবার মৌলভীবাজারের শেরপুরে শতবর্ষী মাছের মেলা বসে। এই মেলা এলাকার ঐতিহ্যের অংশ। মেলায় বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক জাতের ছোট-বড় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। সেখানে কুশিয়ারা, সুরমাসহ এই অঞ্চলের নদ-নদীর অন্য মাছের সঙ্গে বিভিন্ন আকারের বাগাড় মাছও উঠতে দেখা গেছে। প্রায় দুই মণ ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাওয়া হয়েছে দুই লাখ টাকা। মাছের মেলায় বাগাড় মাছের উপস্থিতি পুরোনো। কিন্তু এত প্রচার-প্রচারণার পরও বিপন্ন এই মাছ ধরা ও বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি।
মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিম বাজারে শাপলা মৎস্য আড়তের মালিক মো. মুজাহিদ আহমদ বলেন, ‘আগে কখনো শুনিনি এই মাছ (বাগাড়) বিক্রি করা যাবে না। এ বিষয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণা ছিল না। ঢাকার বিভিন্ন বাজারেও এই মাছ বিক্রি হচ্ছে। তবে বাগাড় মাছ ধরা ও বিক্রি বন্ধ করতে হলে মাছের আড়তদার, মৎস্যজীবী, জেলে সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করতে হবে।’ তিনি বলেন, এটা করা না গেলে জেলেরা হাওরে ও নদীতে মাছ ধরবেন। এটা কে দেখবে। সব জায়গায় তো সরকারি লোক নেই। তাঁরা বাজারে এই মাছ নিয়ে আসবেন না। গ্রাম ও গ্রামের হাটবাজারে বিক্রি করবেন তারা। বাড়িতে পৌঁছে দেবে। এমনিতেই কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জালে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে।’
বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার বলেন, ‘এই মাছটি বিপন্ন অবস্থায় আছে। এটি সংরক্ষণ করা না গেলে আগামী প্রজন্ম চোখেও দেখবে না। এই অঞ্চলের কুশিয়ারা ও সুরমা নদীতে কিছু মাছ এখনো টিকে আছে। মাছটি সংরক্ষণে প্রচার-প্রচারণা চালানো অব্যাহত আছে।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনেকেই এখনো জানেন না এটা বিক্রি নিষিদ্ধ, বিপন্ন। সাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি। সচেতনতা তৈরিতে প্রচারণা আরও জোরদার করা হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’