অবশেষে ফুল হয়ে ফুটলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যে সম্ভাবনা দেখে সেই বয়সভিত্তিক দল থেকে তাঁর ওপর এত বিনিয়োগ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট যেন সেই আস্থার প্রতিদান দিল। তাঁর প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ কোনো কালেই ছিল না। সমস্যা ছিল ধারাবাহিকতায়। একটা ভালো ইনিংস খেলে মাসের পর মাস ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতেন তিনি। অবশ্য ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের প্রায় সব খেলোয়াড়ের মৌলিক সমস্যা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই বিরল ধারাবাহিকতার নজির স্থাপন করলেন শান্ত।
তিন টি২০ ম্যাচ তো বটেই, ওয়ানডেতেও নিয়মিত হেসেছে তাঁর ব্যাট। ৪৭*, ৪৬*, ৫১, ৫৩, ০, ৫৮– ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা বলের ছয় ম্যাচে (তিনটি টি২০ ও তিনটি ওয়ানডে) এগুলো শান্তর রান। এ ধারাবাহিকতা দেখে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেন দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচের পরই বলে দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন তারকা হতে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
চট্টগ্রামে প্রথম টি২০ ম্যাচে ৩০ বলে ৫১ রানের দারুণ ইনিংস খেললেও ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি বলে তাঁর একটা আক্ষেপ ছিল। পরের ম্যাচে মিরপুরের কঠিন উইকেটে চাপের মুখে শান্ত যেভাবে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ বের করে আনেন, তা ছিল দুর্দান্ত। আর ছন্দে থাকলে তার সদ্ব্যবহার করাটাও গতকাল দেখিয়ে দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, গতকাল ফর্মে না থাকা লিটনের সঙ্গে ব্যাটিং করার সময় ইংল্যান্ডের যে বোলার ভালো করছিলেন, সেই লেগস্পিনার আদিল রশিদের বল যতটা সম্ভব তিনি খেলে লিটনকে চাপমুক্ত রাখেন। তিন টি২০তে তাঁর মোট রান ১৪৪। দুই ম্যাচে নট আউট ছিলেন বলে তাঁর গড়ও ১৪৪। শুধু রানই করেননি, তাঁর স্ট্রাইক রেটও (১২৭.৪৩) ছিল নজরকাড়া! সিরিজে একমাত্র জস বাটলারের স্ট্রাইক রেট (১৪০.৫০) তাঁর চেয়ে ভালো।
এমন ব্যাটিংয়ের পর সিরিজসেরা কে হবে, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। সেই পুরস্কার হাতে শান্ত ধন্যবাদ দিয়েছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থদের, ‘আমরা সিরিজ জিতেছি, এজন্য রানগুলো আমার জন্য বিশেষ কিছু। এজন্য আমার কোচিং স্টাফ ও সতীর্থ, যাঁরা সিরিজজুড়ে আমাকে সহায়তা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ দিতে চাই।’
শান্ত দলের সেরা ফিল্ডারও। দুর্দান্ত গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে দারুণ সব ক্যাচ ধরেছেন, বিরামহীনভাবে বোলারদের উজ্জীবিত করেছেন। ফিল্ডিংয়ে আরও উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন তিনি, ‘আমরা যদি ভালো ফিল্ডিং করি, তাহলে বোলারদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। এ বিভাগে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে।’
শান্তর এই পরিবর্তন গত বিপিএল থেকে। ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া নবম বিপিএলে তিনি ছিলেন সেরা রান সংগ্রাহক। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি ও সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এক আসরে ৫০০ রান করেন তিনি। অথচ কয়েক দিন আগেই জাতীয় দলে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তাঁর আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। একের পর এক সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হওয়ায় দলে তাঁর জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সেই শান্ত এখন বাংলাদেশের ব্যাটিং ভরসা।