শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ: যা বললেন সেই নারী এবং অন্যরা

0
188
শাকিব খান

পুলিশ প্রতিবেদনে যা আছে
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশের ‘ইভেন্ট রেফারেন্স নম্বর ৬২৪৯৪৯৫৯’-এর তথ্যমতে, শাকিব খান রানার (ঢালিউড তারকার ডাকনাম) বিরুদ্ধে একটি পুলিশ প্রতিবেদনের অস্তিত্ব রয়েছে। ইভেন্টকে বাংলাদেশের সাধারণ ডায়রির (জিডি) সমতুল্য বলা যায়। সেখানে ঘটনাবলির সারসংক্ষেপে বলা আছে, ‘২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শাকিব খান সিডনিতে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর মধ্যরাতে শাকিব খান হোটেলে ফিরে যান। সেখানে একটি অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে শাকিব খান ও সহপ্রযোজক এক নারীকে (নাম প্রকাশ করা হয়নি) হোটেলে রেখে নিজ বাড়িতে চলে যান রহমত উল্লাহ। পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে সেই নারীর ফোন পেয়ে তিনি আবার সেই হোটেলে যান এবং সেখান থেকে তাঁকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসেন। একই দিন একটি হাসপাতালের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সিডনির সেন্ট জর্জ থানায় একটি বক্তব্য দেন ওই নারী। এ বক্তব্যের সাক্ষ্য হিসেবে পুলিশের কাছে বয়ান দেন রহমত উল্লাহ। পরদিন শাকিব খান অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করেন।’

পুলিশি তদন্ত
মূল অভিযোগের শেষ হালনাগাদ করা হয় ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর। ২০১৬ সালের অভিযোগটির পুলিশি তদন্তের ফলাফল কী, পাবলিক রেকর্ডে তার উল্লেখ নেই। তবে অভিযোগের শুরুতে পুলিশ লিখেছে, ‘ইভেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন: অ্যাকপ্টেটেড, স্ট্যাটাস: ভেরিফায়েড (ঘটনার ধরন: গৃহীত, হাল/অবস্থা: যাচাইকৃত)।’ এ ছাড়া ২০১৮ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে একই পরিচালকের সুপারহিরো চলচ্চিত্রের শুটিং করতে আবার অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন শাকিব খান। সেখানে অবস্থানকালে (২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ) ২০১৬ সালের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে পুলিশ আবার তাঁকে জেরা করে।

শাকিব খান। ছবি: প্রথম আলো

শাকিব খান। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, পূর্বের সেই অভিযোগে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ শাকিবের হোটেলে যায়। তখন শাকিব খানকে অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হলে আমি সেখান থেকে আসতে পারতাম না। অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনের ওপর লোকটার (রহমত উল্লাহ) কোনো আস্থাই নেই। ওটা কোনো কেস নম্বর নয়, ইভেন্ট নম্বর। ওনার পরতে পরতে মিথ্যা। তাঁর একটাই কথা, “টাকা দেন।” ইটস আ ট্র্যাপ।’

রহমত উল্লাহর অভিযোগ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে দেওয়া চিঠি ও অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শাকিব খানের অপেশাদারত্বকেই প্রধান অভিযোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার সহপ্রযোজক রহমত উল্লাহ। দুই ক্ষেত্রেই মূল অভিযোগগুলো হলো, ‘সময়মতো শুটিং স্পটে উপস্থিত না হওয়া, প্রয়োজনীয় সময় না দেওয়া, অপ্রত্যাশিত আবদার, অপেশাদার আচরণ, সিনেমার শুটিং সম্পূর্ণ না করা এবং সহপ্রযোজক নারীকে ধর্ষণ।’

থানায় অভিযোগ করা হলেও ভুক্তভোগী নারীর সামাজিক লাঞ্ছনার ভয়ে বিষয়টি দীর্ঘদিন জনসম্মুখে আনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন রহমত উল্লাহ। অপারেশন অগ্নিপথ নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় এবং সিনেমাটি অসম্পূর্ণ থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।

‘ভুক্তভোগী’ নারীর বক্তব্য
পুলিশের নথিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যে অস্ট্রেলিয়ান নারীর প্রসঙ্গ এসেছে, তাঁর সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। ওই নারী তাঁকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে আমার প্রসঙ্গ টেনে আমার হয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। সিনেমাটি সম্পূর্ণ করা হবে কি না, তা নিয়েও আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আর আমার ব্যক্তিগত ঘটনা নিয়ে যেসব কথা হচ্ছে, তার জন্য আমি কাউকে অনুমতি দিইনি। এমনকি এই প্রসঙ্গ নিয়ে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তা-ও আমি জানতাম না। ২০১৬ সালের অভিযোগটি এখনো তদন্তাধীন। কী করব, তা ভবিষ্যতে বিবেচনা করব। এখন আমি এসব নিয়ে ভাবছি না।’

আইনজীবীর মতামত
শাকিব খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অস্ট্রেলিয়ার এক অভিবাসন আইনজীবী বলেন, ‘দেশটির অভিবাসন আইনের ১১৬ (১) (ই) ধারা অনুযায়ী, কোনো ভিসাধারকের উপস্থিতি যদি অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের কারও স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা সামাজিক শৃঙ্খলায় ঝুঁকি তৈরি করে, তাহলে তাঁর ভিসা বাতিল করা যায়।’ অন্যদিকে যৌন নিপীড়নে ভুক্তভোগী ব্যক্তি যেকোনো সময় অভিযোগ করতে পারেন। তিনি চাইলে পূর্বের অভিযোগ আবারও আনার আবেদন করতে পারেন পুলিশের কাছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি দায়ী কি না, তা নির্ধারণ করবেন আদালত।’

সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন শাকিব খান

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানের বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন শাকিব খান।

তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হলে আমি সেখান থেকে আসতে পারতাম না। অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনের ওপর লোকটার (রহমত উল্লাহ) কোনো আস্থাই নেই। ওটা কোনো কেস নম্বর নয়, ইভেন্ট নম্বর। ওনার পরতে পরতে মিথ্যা।’ শাকিব খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতারণারও একটা লিমিটেশন থাকা উচিত। পর্দায় আমরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি, প্রতিবাদ করি। দিন শেষে কিন্তু ন্যায়েরই জয় হয়। প্রতিবাদ কি শুধুই পর্দায় সীমাবদ্ধ রাখা উচিত? পর্দার বাইরেও তো আমি একজন মানুষ। আমি মানুষকে শেখানোর চেষ্টা করছি, আপনার সঙ্গে কোনো অন্যায় হলে অবশ্যই বিচার চাইবেন, ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করবেন।’

শাকিবের আইনজীবীর বক্তব্য
গত সোমবার রাতে শাকিবের অস্ট্রেলীয় আইনজীবী উপল আমিন একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। বার্তার শুরুতেই উপল আমিন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় যে কেউ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে যেকোনো ব্যাপারে রিপোর্ট করলে তাঁকে একটা ইভেন্ট নম্বর দেওয়া হয়। বাংলাদেশে জিডি বলা হয়। আর আমাদের অস্ট্রেলিয়ায় ইভেন্ট নম্বর বলা হয়। দুটি জিনিস কিন্তু একই। এখন একটা ইভেন্ট নম্বর পাওয়া মানে এই নয় যে কারও নামে কোনো মামলা হয়েছে। বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে যা প্রোপাগান্ডা চলছে, আমি মনে করি, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। শাকিব খানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রহমত উল্লাহ এনেছেন, এটা একটা অর্থনৈতিক চক্রান্ত।’

সংবাদ সম্মেলনে শাকিব খান

সংবাদ সম্মেলনে শাকিব খান

যা বললেন পরিচালক
অভিযোগ প্রসঙ্গে পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, ‘যদি অনৈতিক কোনো কাজ কেউ করে থাকেন, তাহলে তা যেকোনো দেশের আইনেই অপরাধযোগ্য এবং আমাদের সবারই সেটার বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার বদলে টাকা বা অন্য কোনো সুবিধা চাওয়াটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.