শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা

0
63
জাতীয় শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হয়েছেন হাজারো মানুষ।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারের পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা দিয়েছে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শনিবার বিকেল তিনটায় সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এক দফা দাবি ঘোষণা করে প্রায় ১৩ মিনিট বক্তব্য দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা দেন।

এর আগে রাজধানীর মিরপুর, সায়েন্স ল্যাব, রামপুরা, বসুন্ধরা, শনির আখড়া এবং উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে শহীদ মিনারে জড়ো হয়। এতে শহীদ মিনার জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শহীদ মিনার এলাকার আশপাশের রাস্তাগুলোও লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এক দফাটি হলো- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’

তিনি বলেন, ‘এতগুলো খুন হয়েছে লাশের হিসাব আমরা এখনও পাইনি। এই সরকার মানুষ খুন করেছে, এখন সে লাশও গুম করেছে। যারা খুন করেছে তারা খুনি, খুনের বিচার করবে? আমরা তাদের থেকে বিচার প্রত্যাশা করি না। একদিকে নির্যাতন-নিপীড়ন, অন্যদিকে সংলাপের আহ্বান জানানো হচ্ছে। আজ কুমিল্লাতে হামলা করা হয়েছে, আমার ভাই শহীদ হয়েছেন। আমরা শহীদ হইতে ভয় পাই না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্র সংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব৷’

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা জানি জনগণের দাবি কী। জনগণের দাবি আমাদের আর বলার প্রয়োজন নাই। সবাই জানে… এক দফা, এক দাবি। আমাদের জন্য জনগণ নেমেছে, জনগণকে মুক্ত করতে আমরা এখানে এসেছি। আজ এক দফার দাবিতে আমরা এখানে হাজির হয়েছি।’

মানুষের ঢলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের ঢলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনা নয়, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে৷ এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে৷ আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে৷’

যে স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে, তার সঙ্গে মানুষকে যোগ দেওয়া এবং পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাটিও তুলে ধরেন।

এরপর অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেন আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। সেগুলো হলো-

১। কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা দেবেন না।

২। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।

৩। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।

৪। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

৫। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না।

৬। সব সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।

৭। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।

৮। দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টস কর্মী ভাইবোনেরা কাজে যাবেন না।

৯। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।

১০। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংক খোলা থাকবে।

১১। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।

১২। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।

১৩। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।

১৪। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।

১৫। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপণী-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন-ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহণ, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণ, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।

এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মাহিন সরকার, আবু বাকের মজুমদার প্রমুখ।

সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন, আইনজীবী মানজুর আল মাতীন, অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.